ফাইল চিত্র।
মোল্লার ভেড়ির বর্জ্য, পূর্ব কলকাতা জলাভূমির একাংশ ভরিয়ে দিচ্ছে বলে উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে দু’বছর আগে ২০১৯ সালের মে-তে জাতীয় পরিবেশ আদালত মোল্লার ভেড়ি ঘিরে দিতে বিধাননগর পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিল। দু’বছর পরে দেখা যাচ্ছে, মোল্লার ভেড়িতে এখনও পর্যন্ত ৯৫০ মিটার ঘেরার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এখনও প্রায় ৯০০ মিটার ঘেরার কাজ বাকি রয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। ফলে তা ঘিরতে আরও কত সময় লাগবে, সে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশকর্মীরা।
এক পরিবেশ বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘দু’বছরে ৯৫০ মিটার! অর্থাৎ, বছরে মাত্র ৪৭৫ মিটার করে ঘেরার কাজ হয়েছে। অথচ জলাভূমিতে বর্জ্যের সংমিশ্রণ আটকাতে ঘেরার কাজ বিধাননগর পুরসভাকে জরুরিভিত্তিতে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ আদালত।’’ জরিমানার প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন, মোল্লার ভেড়ি নিয়ে নির্দেশ অমান্য করায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিধাননগর পুরসভাকে দু’কোটি টাকার অন্তর্বর্তী জরিমানা করেছিল পরিবেশ আদালত।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে ৫০ লক্ষ টাকা ‘পারফর্ম্যান্স গ্যারান্টি’ হিসেবে জমা রাখার নির্দেশও দিয়েছিল।
সম্প্রতি পরিবেশ আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় বিধাননগর পুরসভা জানিয়েছে, অন্তবর্তী জরিমানার ২ কোটি টাকা এবং ৫০ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে জমা করা হয়। সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, এই জরিমানার পরেও যে গতিতে মোল্লার ভেড়ি ঘিরে ফেলার কাজ চলছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও মোল্লার ভেড়ি ঘেরার কাজই শেষ করে উঠতে পারল না পুরসভা! বাকিটা ঘেরার জন্য আবার দরপত্র ডাকা হয়েছে। সেটা ঘিরতে কি তবে আরও দু’বছর সময় লাগবে? ভাবছি, এটা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, না অন্য কিছু!’’
যদিও বিধাননগর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মান্য করেই যতটা সম্ভব দ্রুত গতিতে মোল্লার ভেড়ি ঘিরে ফেলার কাজ করা হচ্ছে। সেই মতোই দু’মাস আগে ওই ভেড়ির বাকি অংশ, অর্থাৎ ৯০০ মিটার ঘেরার জন্য দরপত্র ডেকেছিল পুরসভা। গত মাসে রাজ্য পরিবেশ দফতরের তরফে সেই কাজের আর্থিক অনুমোদনও মিলেছে। যার প্রস্তাবিত খরচ ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা। শুধু তাই নয়, মোল্লার ভেড়িতে প্রায় ৩ লক্ষ মেট্রিক টন বর্জ্য বায়ো মাইনিং পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনার জন্য দু’টি ট্রমেল (কঠিন বর্জ্য পৃথকীকরণের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র) বসানো হয়েছে। বিধাননগর পুরসভার আইনজীবী পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনেই যাবতীয় কাজ করা হচ্ছে। মোল্লার ভেড়ির যতটা অংশ এখনও ঘিরে ফেলার কাজ বাকি আছে, ইতিমধ্যেই তার জন্য ওয়ার্ক অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। ওই ভেড়িতে বায়ো মাইনিংয়ের কাজ আগামী বছরের জুলাই মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার আশা রয়েছে।’’