Dengue Death

ডেঙ্গি ও জ্বরে মৃত দুই, নভেম্বরেই হয়তো শিখরে আক্রান্তের সংখ্যা

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিগত বছরগুলিতে দেখা গিয়েছিল, নভেম্বরের শুরু থেকেই ডেঙ্গির প্রকোপ কমতে শুরু করে। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে পুরো চলে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৪১
Share:

রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে মশাবাহিত এই রোগে মৃত্যুরসংখ্যাও। সেই তালিকায় প্রবীণ ছাড়াও আছে কমবয়সি এবং শিশুরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে হাওড়ার বাসিন্দা ৯ বছরের এক বালকের। তার ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির কথা উল্লেখ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিজনেরা।

Advertisement

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিগত বছরগুলিতে দেখা গিয়েছিল, নভেম্বরের শুরু থেকেই ডেঙ্গির প্রকোপ কমতে শুরু করে। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে পুরো চলে যায়। কিন্তু এ বার সেই লক্ষণ নেই। বরং চলতি মাসের গোড়াতেই রাজ্যের মোট আক্রান্ত ৫০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। মাঝ নভেম্বরে সেই সংখ্যা ৫০ হাজার পার করে যাবে বলে মত চিকিৎসকদের।

রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার কৃষ্ণনগরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ডেঙ্গিএকটু একটু আছে। যত ঠান্ডা পড়বে ডেঙ্গি কমে যাবে। নানা রকম জিন নিয়ে ডেঙ্গি বার বার আসে। পুরসভা, পঞ্চায়েতে যাঁরা আছেন, বিধায়কেরা সতর্ক থাকুন। এলাকা পরিষ্কার রাখুন। মশা বাড়তে দেবেন না।” মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, পুজো হয়েছে, জগদ্ধাত্রী পুজো হয়েছে। কাঠ-বাঁশ পড়ে আছে। সেই জায়গাগুলোতে মশা বাসা বাঁধে। তাই জল যেন জমে না থাকে।

Advertisement

রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাও বলছেন, “ডেঙ্গির মশার বংশবিস্তার রোধের দায়িত্ব পুরসভা বা পঞ্চায়েতের। সেই কাজ তাদের ভাল ভাবে করতে হবে। না হলে মশাবাহিত এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য। প্রতিটি বৈঠকেই এই বিষয়টি বার বার বলা হচ্ছে।” চলতি বছরের নভেম্বর জুড়ে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত চলবে বলেই মত পতঙ্গবিদ অমিয়কুমার হাটির। তাঁর কথায়, “অন্যান্য বার অক্টোবরে সর্বাধিক স্তরে পৌঁছয় আক্রান্তের সংখ্যা। এ বারে সেটা নভেম্বরে হবে। কারণ, অন্য বছর অগস্টের শুরু থেকেই ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যায়। চলতি বছরে সেটি অগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুর দিক থেকে হয়েছে।” তিনি আরও জানাচ্ছেন, চলতি বছরের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত এবং এখনও ঠান্ডা ঠিক মতো না পড়ায় বড় সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তবে ডেঙ্গি-মশার বংশবিস্তার রোধের কাজেও কিছুটা ঘাটতি আছে বলে মনে করেন ওই চিকিৎসক। ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ ঠিক মতো না হওয়ার কম-বেশি অভিযোগ গোটা রাজ্যেই।

জানা যাচ্ছে, হাওড়া পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পিলখানা সেকেন্ড বাইলেনের বাসিন্দা জিশান রাজা (৯) ৩ নভেম্বর থেকে জ্বরে আক্রান্ত ছিল। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসক দেখে ডেঙ্গি পরীক্ষা করতে বলেন। রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। এর পরে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসাশুরু হয় জিশানের। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে তাকে মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জরুরি বিভাগে যখনআনা হয় ওই বালককে, তখন তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে গিয়েছে। তড়িঘড়ি পেডিয়াট্রিক আইসিইউ-তে নিয়েগিয়ে ভেন্টিলেশন দিলেও গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়।

অন্য দিকে, মঙ্গলবার গভীর রাতে বি সি রায় শিশু হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ঋত্বিকা সাউ নামেসাত বছরের এক বালিকার। তাদের আদি বাড়ি বৌবাজারে। সম্প্রতি ওই পরিবারটি বিধাননগরের ১৮ নম্বরওয়ার্ডে ভাড়া এসেছিল। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইন্দ্রনারায়ণ বারুই বলেন, “খুবই দরিদ্র পরিবার।বাচ্চাটির তিন-চার দিন ধরে জ্বর ছিল। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে নিয়েযাননি পরিজনেরা। খবর পেয়ে মঙ্গলবার বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।”যদিও ওই শিশুর ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ নেই। সেপসিসের কারণে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

অধিকাংশ মানুষ অনেক দেরিতে চিকিৎসা করাতে আসায় বিপদবাড়ছে বলেই মত চিকিৎসকদের। যেমন, আমরি হাসপাতালেচলতি মরসুমে যে ৮-৯ জনের ডেঙ্গিতেমৃত্যু হয়েছে, তাঁরা সকলেই ভর্তির ১২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারাগিয়েছেন। যার নেপথ্যেরবড় কারণ, জ্বর হওয়ার পরেও দেরিতে চিকিৎসা শুরু করে হাসপাতালে আসা। কলকাতা ও হাওড়া পুর এলাকার বিভিন্ন নার্সিংহোম ওস্থানীয় চিকিৎসকদের এই বিষয়ে সচেতন করা ও প্রশিক্ষণদেওয়ার জন্য সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল আমরিহাসপাতাল গোষ্ঠী। স্বাস্থ্যভবনের সবুজ সঙ্কেত মেলায় হাওড়া পুর এলাকা দিয়ে সেইকর্মসূচির শুরু করছে ওই হাসপাতাল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement