প্রতীকী ছবি।
অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ থেকে শিক্ষা নিয়ে সঙ্কটজনক রোগীদের চিকিৎসায় আগাম প্রস্তুতি নিতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। কলকাতা এবং রাজ্যের ২৩টি জেলার (স্বাস্থ্য জেলা-সহ) মেডিক্যাল কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ২৪ শয্যার ‘হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’ তৈরির নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই মতো রাজ্যের ৭৯টি হাসপাতালে তৈরি হবে ওই ইউনিট।
৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্যের অধিকর্তা সৌমিত্র মোহনের সই করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কথা ভেবে দ্রুত এই ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে হবে। ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের ওই ইউনিট তৈরির পরিকল্পনা ও খরচের বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “সিসিইউ ও এইচডিইউ এক জায়গায় বলে প্রকল্পটিকে হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বলা হচ্ছে।”
শহরের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ আলিপুরদুয়ার, বীরভূম, কোচবিহার, হাওড়া, হুগলি, জলপাইগুড়ি, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমানে তিনটি করে, বাঁকুড়ায় ছ’টি, দক্ষিণ দিনাজপুর, ডায়মন্ড হারবার, মালদহ, নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা, পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, উত্তর দিনাজপুরে দু’টি করে, দার্জিলিং, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পাঁচটি করে, পূর্ব মেদিনীপুরে সাতটি, ঝাড়গ্রামে একটি, নদিয়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরে চারটি করে হাসপাতালে ওই ইউনিট হবে।
সূত্রের খবর, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এইচডিইউ শয্যা পেতে সমস্যা হয়েছে। কারণ, অধিকাংশ জায়গায় ওই পরিষেবা ছিল না। সঙ্কটজনক রোগীকে সিসিইউ কিংবা এইচডিইউ পেতে বহু দূরেও যেতে হয়েছে। সময় নষ্ট হওয়ায় চিকিৎসায় দেরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষণ, তৃতীয় ঢেউকে সামনে রেখে মেডিক্যাল কলেজ, জেলা, মহকুমা, গ্রামীণ, সুপার স্পেশ্যালিটি স্তরের হাসপাতালে ওই পরিষেবা চালু হলে আগামী দিনে জেলায় সঙ্কটজনক রোগীর চিকিৎসা পেতে সুবিধা হবে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, যে সব হাসপাতালে ওই পরিষেবাই নেই, সেখানে ২৪টি (সিসিইউ-৮ এবং এইচডিইউ ১৬) শয্যা তৈরি হবে। যেখানে রয়েছে, সেখানে ৬-১২টি শয্যা যুক্ত করতে হবে। এই ইউনিট তৈরিতে কিছু নির্দেশিকা বেঁধে দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। যেমন, চেষ্টা করতে হবে হাসপাতালের একতলায় ইউনিট তৈরি করার। লিফট থাকলে তবেই উপরের তলায় তা করা যাবে। ঢোকা-বেরোনোর রাস্তা এবং দরজা-জানলা তৈরির নিয়ম রয়েছে। ২৪টি শয্যা এক জায়গায় থাকলে ৩৫০০ বর্গফুট জায়গা হলে চলবে। আলাদা থাকলে সিসিইউ-র ১৫০০ ও এইচডিইউ-র ২৫০০ বর্গফুট লাগবে।
এইচডিইউ-তে স্বচ্ছ কাচ দিয়ে ঘেরা দু’টি আইসোলেশন কিউবিকল রাখতে হবে। প্রতি শয্যার জন্য ১০০-১২৫ বর্গফুট এবং অতিরিক্ত ২০ শতাংশ জায়গা রাখতে বলা হয়েছে। ওই ইউনিটেই মেডিক্যাল অফিসার, নার্স ও প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের ঘর একসঙ্গে রাখতে হবে। আলো, অক্সিজেন-ডায়ালিসিস ব্যবস্থা থেকে ইউনিটের তাপমাত্রা, শব্দমাত্রা-সহ চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য বিষয়েরও উল্লেখ রয়েছে নির্দেশিকায়।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সঙ্কটজনক রোগীর চিকিৎসায় রাজ্যে ৮৮৭টি শয্যা আছে। তৃতীয় ঢেউ সামলাতে আরও প্রায় ১০০০ শয্যা বাড়ানো হবে। রাজ্যের ৭৯টি হাসপাতালে আগের এবং নতুন মিলে শয্যা হবে ১৮৯৬টি।’’