অভিযুক্তেরা গ্রামের দরিদ্র বাসিন্দাদের টাকার লোভ দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র ও ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিত। প্রতীকী ছবি।
হাজার কয়েক টাকার প্রলোভন দেখিয়ে গরিব মানুষের নথি ওতথ্য হাতিয়ে নিয়ে তা দিয়ে খোলা হত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। যে অ্যাকাউন্টে জমা পড়ত প্রতারণা করে পাওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা। একটি প্রতারণার ঘটনার তদন্তে নেমে এমনই এক আন্তঃরাজ্য জালিয়াত-চক্রের হদিস পেয়েছেন পর্ণশ্রী থানার তদন্তকারীরা। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই চক্রের পাঁচ জনকে। যাদের মধ্যে তিন জনকে ধরা হয়েছে রবিবার রাতে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে মোবাইলের বহু সিম কার্ড এবং ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ড। পুলিশি সূত্রের খবর, রবিবার রাতে গ্রেফতার হওয়া ওই দুষ্কৃতীরা প্রত্যেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদার বাসিন্দা। সোমবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় শুক্রবার ধৃত বাকি দু’জনও বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এদের সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল জামতাড়া গ্যাংয়ের দুষ্কৃতীদের।
পুলিশের দাবি, অভিযুক্তেরা গ্রামের দরিদ্র বাসিন্দাদের টাকার লোভ দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র ও ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিত। এর পরে সেই সব নথির সাহায্যে খুলে ফেলত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। গ্রামবাসীদের থেকে ডেবিট কার্ডও হাতিয়ে নিত প্রতারকেরা। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ওই সমস্ত অ্যাকাউন্ট খোলার পাশাপাশি মোবাইলের প্রচুর সিম কার্ড কেনা হত। সেই সমস্ত সিম কার্ডের মাধ্যমেই চালানো হত প্রতারণার কারবার। যে টাকা জমা পড়ত গ্রামবাসীদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টে।
ঘটনার সূত্রপাত গত অগস্ট মাসে। পর্ণশ্রী থানা এলাকার বাসিন্দা এক ব্যক্তির কাছে একটি ফোন আসে। বলা হয়, তাঁর বিদ্যুতের বিল বকেয়া রয়েছে। না মেটালে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত ওই প্রৌঢ় ভয় পেয়ে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা প্রতারকের কথা মতো একটি অ্যাপ ডাউনলোড করেন। তা করতেই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় আট লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
ঘটনার তদন্তে নেমে পর্ণশ্রী থানার অফিসার রাজীব দাস জানতে পারেন, যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, সেটির মালিক উত্তর ২৪ পরগনার এক মহিলা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি সেই ফোন নম্বর ব্যবহার করেন না। পুলিশকে মহিলা জানান, ঋণ পাওয়ার আশায় এক জনকে তিনি নিজের ব্যক্তিগত নথি ও তথ্য দিয়েছিলেন। যাহাতবদল হয়ে চলে গিয়েছে প্রতারকদের কাছে। বিভিন্ন সূত্র ঘেঁটে সন্তোষকুমার সিংহ নামে এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশকে সে জানায়, ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের এক বাসিন্দা এবং হিন্দমোটরের এক হোটেল-মালিককে প্রচুর নথি-সহ বেশ কিছু অ্যাক্টিভিটেড ভুয়ো সিম কার্ড তুলে দিয়েছে সে। গতশুক্রবার ওই দু’জনকে পাকড়াও করে পুলিশ। তাদের জেরা করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিষয়টি জানা যায়। তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতেরা একটি চক্রের সদস্য। তাদের সঙ্গে জামতাড়া গ্যাংয়ের যোগ রয়েছে। প্রতারণার ফোন জামতাড়া থেকে করা হলেও যে অ্যাকাউন্টে ওই প্রতারণার টাকা জমা পড়ত, সেগুলি এই রাজ্যের।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই চক্রে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে। ধৃতদের জেরা করে বাকি ভুয়ো অ্যাকাউন্টের খোঁজ করা হচ্ছে।