—প্রতীকী চিত্র।
বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ এসেছিল একাধিক। তারই কারণ খুঁজতে গিয়ে কার্যত চোখ কপালে উঠল বিএসএনএলের কর্মীদের। মাটি খুঁড়ে চুরি হয়েছে ৮০০ জোড়া কেবল। আর তার জেরেই থমকে গিয়েছে লেক টাউন-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বিএসএনএলের পরিষেবা। ল্যান্ডফোন বিকল হয়েছে রাজ্যের এক মন্ত্রীর বাড়ি, হাসপাতাল, নার্সিংহোমের মতো জায়গায়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুধবার সকালে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে লেক টাউন থানার পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে চার জন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। বিএসএনএল সূত্রের খবর, দুষ্কৃতীরা ওই বিপুল সংখ্যক তার কলকাতারই বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দিয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম ইবাদত শেখ, সুখদেব পণ্ডিত, অজিতকুমার পণ্ডিত, উমেশ দাস ও গোপাল দাস। তাদের মধ্যে ইবাদত হাওড়ার সাঁকরাইলের বাসিন্দা। বাকিরা সবাই ঝাড়খণ্ডের গিরিডি অঞ্চলের বাসিন্দা। পুলিশ ও বিএসএনএলের প্রাথমিক ধারণা, ধৃতেরা নেহাতই চক্রের সদস্য। এর পিছনে অন্য বড় মাথা রয়েছে। তাদের হেফাজতে নিয়ে এই চুরির পিছনে কারা জড়িত, তা জানতে চাওয়া হবে বলে দাবি পুলিশের।
বিএসএনএলের আধিকারিকেরা জানান, দিন দশেক আগে ওই চুরির বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কাস্টমার কেয়ারে পরের পর পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ আসছিল লেক টাউন-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে। এমনকি, বিশিষ্ট নাগরিক-সহ
অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার থেকেও অভিযোগ এসেছিল। কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে নজরে আসে, মাটির নীচ থেকে বিস্তীর্ণ এলাকার কেবল উধাও।’’
কেবল চুরি বিরল ঘটনা নয়, তা মানছে বিএসএনএলও। অনেক ক্ষেত্রেই মাটির তলা থেকে
বেরিয়ে থাকা অংশ চোরেরা কেটে নিয়ে যায়। কিন্তু আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, মাটির বেশ খানিকটা নীচে, ভারী ঢাকনা দেওয়া ডাক্টের মধ্যে থাকে ওই পরিষেবা সরবরাহকারী তার। সেই রকম জায়গা থেকে তার কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ডাক্টের উপরে থাকা ওই ভারী ঢাকনা সরাতেই দু’-তিন জন লোক দরকার হয়।’’ প্রায় দেড় দশক আগে হাওড়ায় এ ভাবে মাটির নীচ থেকে টেলিফোনের কেবল কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার লেক টাউন থানায় বিএসএনএলের তরফে অভিযোগ জানানো হয়। তার পরেই এ দিন সকালে ওই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কমিশনারেট সূত্রের খবর, পুলিশের চোখে কার্যত ধুলো দিয়েই তার কাটত চোরেরা। কারণ তাদের হাতে থাকত মাটি খুঁড়ে কাজ করার ভুয়ো কাগজপত্র। পুলিশ কখনও দেখতে চাইলে ওই ভুয়ো অনুমতিপত্রই দেখানো হত বলে দুষ্কৃতীরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ব্যবহার করা হত বিএসএনএলের ভুয়ো লোগো লাগানো গাড়িও। যে কারণে বিএসএনএলের ভিতরেও এই চক্রের শিকড় প্রচ্ছন্ন রয়েছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ। এ দিন সকালে লেক টাউন চত্বরেই ফের এক জায়গায় ওই ভাবে তার চুরির চেষ্টা করার সময়ে ধৃতেরা হাতেনাতে ধরা পড়ে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃতদের থেকে গাঁইতি, শাবল-সহ মাটি খোঁড়ার একাধিক সরঞ্জাম পেয়েছে পুলিশ।