International Kolkata Book Fair 2024

নতুন ভবন গড়ে বইমেলার ইতিহাস মেলে ধরার উদ্যোগ

বইমেলা নিয়ে মাতলেও ক’জনেরই বা খেয়াল থাকে, ৪৭ বছরে পড়া বইমেলা বাংলা ও বাঙালির পাঁচ দশকের ইতিহাসেরও দলিল।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫৪
Share:

উৎসাহী: বইমেলায় সপ্তাহান্তের ভিড়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

বইমেলার নামী প্রকাশকের স্টলে অনতি অতীতের দিকপাল সাহিত্যিকদের লেখা চিঠির ছবি ভিড় করে দেখছে মেলার জনতা। বুদ্ধদেব বসু, সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রতিভা বসুদের চিঠিতে অভিযোগ, অনুযোগ, আবদার, খুনসুটির অন্ত নেই। একটি চিঠিতে শঙ্খ ঘোষ তাঁর একটি কবিতার বই দীর্ঘদিন অপ্রকাশিত কেন, জানতে চেয়ে প্রকাশককে মৃদু বকুনি দিয়েছেন। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় আবার একটি চিঠিতে তাঁর দন্তশূল এবং অন্য রোগভোগের কথা জানাচ্ছেন। হাতচিঠির বাহকের হাতে তাঁর প্রাপ্য টাকার কিছুটা তক্ষুণি পাঠিয়েও দিতে লিখছেন তিনি। চিঠি পড়তে পড়তে শনিবারের ভিড়ে ঠাসা মেলায় কয়েক জন মাঝবয়সির গুঞ্জন কানে এল, ‘‘আমাদের কলেজজীবনেও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়েরা বইমেলা আলো করে থাকতেন। তাঁদের ঘিরে কত মজার কাণ্ড ঘটত।’’ আর আজকের প্রৌঢ়দের স্মৃতিতে, সমরেশ বসু ছিলেন বইমেলার উত্তমকুমার।

Advertisement

বইমেলা এ ভাবে আমাদের সমাজজীবনের একটি টুকরো ছবি তুলে ধরে। কিংবা বাঙালির সাহিত্যচর্চার ইতিহাসেও আলো ফেলে থাকে। তবে, বইমেলা নিয়ে মাতলেও ক’জনেরই বা খেয়াল থাকে, ৪৭ বছরে পড়া বইমেলা বাংলা ও বাঙালির পাঁচ দশকের ইতিহাসেরও দলিল। এ বারের বইমেলা চলতে চলতেই সেই ইতিহাস রক্ষায় কিছু স্থায়ী উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার খবর ভেসে এল। বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই প্রকাশক এবং বই বিক্রেতা গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সল্টলেকে বইমেলার এই স্থায়ী প্রাঙ্গণের কাছে আর একটি ভবন নির্মাণের জমি চেয়েছিলেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টিতে প্রাথমিক ভাবে সায় দিয়ে এ বিষয়ে গিল্ডকে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে বলে গিল্ড সূত্রের খবর। গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে-ও বিষয়টি নিয়ে উৎসাহী। তাঁর কথায়, ‘‘একটি ভবন তৈরির জায়গা মিললে বইমেলার ইতিহাস ধরে রাখা যাবে। সেই সঙ্গে দেশ, বিদেশের অতিথিদের থাকার একটা পাকাপাকি জায়গাও মিলতে পারে।’’

গিল্ডের দাবি মেনে বইমেলাকে কলকাতার গর্বের একটি পরিসর ধরে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে রাজ্য সরকার। তবে, সল্টলেকে বইমেলার মাঠের একেবারে পাশে জায়গা না-ও মিলতে পারে। কিন্তু কাছাকাছির মধ্যে বইমেলার জন্য আর্কাইভের
জায়গা মিলতে পারে বলে সরকারি সূত্রের খবর। গিল্ডের প্রাক্তন কর্তা অনিল আচার্যের মনে আছে, বইমেলায় রিচার্ড ডকিন্স, জাক দেরিদা, গুন্টার গ্রাস থেকে
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা লালুপ্রসাদ যাদবের আসার স্মৃতি। ১৯৯৭ সালে ময়দান বইমেলায় আগুন লাগার পরে ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনিও বইমেলার একটি পর্ব। ত্রিদিব বলছিলেন, ‘‘এ সবই বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অঙ্গ। এ সব সকলের জন্য ছবিতে-লেখায় সাজিয়ে রাখা গেলে সারা বছরই বইমেলার আমেজটুকু থাকবে। পরের প্রজন্ম জানতে পারবে, কী ভাবে বইমেলা আজকের চেহারায় এল।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement