(বাঁ দিকে) কলেজে বসানো নতুন মূর্তি। ভাঙা সেই মূর্তি (ডান দিকে)। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী ও ফাইল চিত্র।
কেটে গিয়েছে চার বছরেরও বেশি সময়। ২০১৯ সালের ১৪ মে বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার তদন্তের এখনও নিষ্পত্তি হল না। অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে গিয়েছেন অনেক আগেই। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ওই ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে যে তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল, তদন্তের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত সেই তৎপরতা দেখা গেল না কেন? অনেকেরই বক্তব্য, এমন একটি ঘটনাতেও যদি দোষীরা শাস্তি না পায়, তা হলে তো আবার এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে উৎসাহ পাবে তারা।
বিদ্যাসাগর কলেজে তাণ্ডবের পরে কলেজের তরফে এক ছাত্রী বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তদন্তে নেমে পুলিশ মোট ৩৭ জনকে গ্রেফতার করেছিল। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, সংঘর্ষ বাধানো এবং মারধর-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছিল পুলিশ। কিন্তু ধৃত ৩৭ জনই ২০১৯ সালের ৩০ অগস্ট আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটিও তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। আলাপন ছাড়াও তদন্ত কমিটিতে ছিলেন তৎকালীন নগরপাল অনুজ শর্মা, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার তৎকালীন ওসি কৌশিক দাস এবং বিদ্যাসাগর কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ গৌতম কুণ্ডু। লোকসভা ভোটের আগে সে দিন বিদ্যাসাগর কলেজে ঠিক কী ঘটেছিল এবং তাতে কারা জড়িত ছিল, তা সবিস্তার জানতেই মুখ্যমন্ত্রী ওই তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছিল। কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ গৌতম কুণ্ডু অবসর নিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি জানান, তাঁরা রিপোর্ট দিয়েছিলেন। যা যা তথ্য তাঁরা পেয়েছিলেন, সব আদালতকে জানিয়েছিলেন। গৌতম বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে আমি সেখানে ছিলাম না। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যে চলে আসি। জানতে পারি, কলেজে ঢুকে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। সে দিন কলেজের সিসি ক্যামেরাগুলি কাজ করেনি। কারণ, সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক কলেজের অন্য একটি ঘটনার সূত্রে তদন্তকারীরা নিয়ে গিয়েছিলেন।’’ এ বিষয়ে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন।’’
চার বছর আগের সেই ঘটনার কথা বলতে গেলে এখনও আতঙ্ক গ্রাস করে গৌতমকে। তিনি বলেন, ‘‘আলো ভেঙে দিয়ে অন্ধকারের মধ্যেই তাণ্ডব চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। কলেজের বাইরে এবং ভিতরে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। অন্ধকার থাকায় তখন দুষ্কৃতীদের চিহিত করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আশপাশের এলাকার কয়েকটি সিসি ক্যামেরা থেকে কিছু ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছিল। যার ভিত্তিতে ৩৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু পরে তাঁরা জামিন পেয়ে যান বলেই জানি।’’ গৌতম জানান, সেই ঘটনার পরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কলেজের বাইরে প্রথমে বিদ্যাসাগরের একটি প্লাস্টার অব প্যারিসের মূর্তি বসানো হয়েছিল। পরে সেটি বদলে ব্রোঞ্জের মূর্তি বসানো হয়েছে। কলেজের ভিতরেও বসেছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি।
তবে, ওই কলেজে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে যে সংগ্রহশালা তৈরি হওয়ার কথা ছিল, চার বছরেও তা হয়নি। সংগ্রহশালা হয়েছে বিদ্যাসাগর অ্যাকাডেমিতে। গৌতম বলেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। ঘটনার পরে একটি সভায় তিনি বলেছিলেন, কেন্দ্রের তরফে পঞ্চরত্নের একটি অত্যন্ত দামি বিদ্যাসাগরের মূর্তি তৈরি করে কলেজকে দেওয়া হবে। সেই মূর্তি এখনও আসেনি।’’