Death

২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার দুর্ঘটনা, মৃত্যু দু’জনের

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে এস-৩১ রুটের একটি সরকারি বাস এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মেরেছে বলে খবর যায় রিজেন্ট পার্ক থানায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:০৪
Share:

অঘটন: কোল বার্থ রোডের এই জায়গায় মঙ্গলবার রাতে একটি লরি ঢুকে পড়ে ফুটপাতের হোটেলে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

জাতীয় পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ শেষ হয়েছে মাত্র পাঁচ দিন আগে। এ বছর কবে শহরে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করা যায়, তার ভাবনাচিন্তা করছে লালবাজারও। তার মধ্যেই মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত, গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে পথ দুর্ঘটনা ঘটল মোট চারটি। যার মধ্যে দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকাতেই তিনটি পথ দুর্ঘটনা হয়েছে মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে। মৃতের সংখ্যা বুধবার রাত পর্যন্ত দুই। তবে আহত হয়েছেন মোট সাত জন। তাঁদের মধ্যে বাসের চাকায় পিষে জখম হওয়া এক বৃদ্ধের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তাঁর দু’টি পা-ই বাদ যেতে পারে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে এস-৩১ রুটের একটি সরকারি বাস এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মেরেছে বলে খবর যায় রিজেন্ট পার্ক থানায়। পুলিশ গিয়ে দেখে, টালিগঞ্জ দমকল কেন্দ্রের ঠিক বিপরীতে রাস্তায় পড়ে আছেন এক বৃদ্ধ। তাঁর দুই পায়ের উপর দিয়েই বাসের চাকা চলে গিয়েছে। টালিগঞ্জ মোড়ের কাছে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বাসটিকে আটক করেন। পুলিশ এর পরে বৃদ্ধকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। পরে পরিবারের লোকজন বৃদ্ধকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।

বছর বাষট্টির ওই বৃদ্ধের নাম হরেন শীল। তাঁর বাড়ি চারু মার্কেট থানা এলাকায়। দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই থাকেন তিনি। তাঁর এক ছেলে সোনা শীল জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার নেপালগঞ্জ এলাকায় তাঁদের একটি বাড়ি রয়েছে। এ দিন সকালে সেখান থেকেই সাইকেলে চারু মার্কেটের দিকে আসছিলেন হরেনবাবু। তখনই বাসটি তাঁকে ধাক্কা মারে। সোনার কথায়, ‘‘চিকিৎসকেরা বলছেন, দুই পা তো বটেই, বাবার মুখেও ভাল রকম চোট লেগেছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। মাকে নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। ৫৬ বছর বয়স তাঁর। সুগার রয়েছে। বাবার এ রকম হয়েছে শুনলে তিনি যে কী করবেন, জানি না।’’

Advertisement

একই রকম উৎকণ্ঠায় খিদিরপুরের কোল বার্থ রোডের বাসিন্দা মহম্মদ রেয়াজ। মঙ্গলবার রাতে তাঁর চোখের সামনেই ফুটপাতের হোটেলে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে একটি দশ চাকার লরি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাটিতে পড়ে যান তিনি। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পান। মহম্মদ রেয়াজ এ দিন বলেন, ‘‘সবে ভাতের দলা মুখে দিয়েছি। লরিটা ওই ভাবে ঘাড়ের কাছে এসে দাঁড়াবে ভাবিনি।’’ এলাকাটি দক্ষিণ বন্দর থানার অন্তর্গত। পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতের ওই হোটেল এবং আশপাশের কয়েকটি ঘর ভেঙে ঢুকে পড়ে লরিটি। যার জেরে লরির চালক মহম্মদ ইমতিয়াজ-সহ মোট ছ’জন জখম হন। সুবারানি রাম, সুনীল রাম, মোহিত কুমার, আফজল খান এবং ইমতিয়াজকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আরও এক ব্যক্তি আহত অবস্থায় ওই হাসপাতালেই ভর্তি। তবে তাঁর পরিচয় বুধবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। প্রায় ওই সময়েই মাঝেরহাট স্টেশনের কাছে গাড়ির ধাক্কায় আহত হন এক ব্যক্তি। তাঁকেও এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংজ্ঞা না ফেরায় তাঁরও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

কোল বার্থ রোডের ঘটনার মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই বাস্কুল সেতুতে মোটরবাইকে ধাক্কা মারে একটি লরি। বাইকটি চালাচ্ছিলেন ইমরান কমল নামে বছর সাঁইত্রিশের এক যুবক। পিছনে ছিলেন তাঁর স্ত্রী, বছর তিরিশের সাবিনা আলম। পুলিশ জানায়, ইমরানের মাথায় হেলমেট থাকলেও সাবিনার মাথা ছিল ফাঁকা। এসএসকেএমে পাঠানো হলে দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করা হয়। গার্ডেনরিচের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে কড়েয়ায় নিজেদের পাড়ায় ফিরছিলেন ইমরানেরা। পথেই ঘটে দুর্ঘটনা। ইমরানের এক আত্মীয় হাসপাতালে বলেন, ‘‘ওঁদের ছোট ছোট দু’টি ছেলে রয়েছে। তাদের এখন কে মানুষ করবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement