একসঙ্গে: সকালের জলখাবার তৈরিতে ব্যস্ত তিন নাইজিরীয়। নিজস্ব চিত্র
অচেনা দেশে এসে প্রথম প্রথম নিজের দেশের জন্য মন খারাপ করত ওঁদের। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিসার মেয়াদও ফুরিয়ে আসতে থাকায় এখন এগিয়ে আসছে চলে যাওয়ার দিন। এ বার ওঁদের মন খারাপ এ দেশের মানুষের কথা ভেবে।
ওঁরা পাঁচ নাইজিরীয় পেশায় জিমন্যাস্ট। সুদূর কেনিয়ার মোম্বাসা থেকে ভারতে এসেছেন সার্কাসে জিমন্যাস্টিক্স দেখাতে। উত্তর কলকাতার সিঁথির মাঠে বসেছে ওই সার্কাস। সার্কাসের তাঁবুতে বসেই দলের তিন নাইজিরীয় হ্যারিসন, অ্যালেক্স এবং অ্যান্ড্রু জানালেন, গত ছ’মাসে ভারতবর্ষের মানুষকে ভালবেসে ফেলেছেন তাঁরা। এ দেশের মানুষজন খুবই আন্তরিক।
সম্প্রতি সিঁথির ওই মাঠে গিয়ে দেখা গেল, সার্কাসের তাঁবুর পিছনে সকালের জলখাবার তৈরি করছেন তিন বন্ধু। বছর তিরিশের হ্যারিসন জানালেন, তাঁদের সকালের জলখাবার হচ্ছে বিভিন্ন আনাজ দিয়ে সুজির উপমা। এই পদ তৈরি করা তাঁরা শিখেছেন সার্কাসেরই এ দেশের বন্ধুদের কাছে। উপমা খেয়ে শুরু হবে তাঁদের অনুশীলন।
তবে এখন জীবজন্তুর খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সার্কাসের সেই সোনালি দিন আর নেই, আক্ষেপ করছিলেন ম্যানেজার সজল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘জীবজন্তুর খেলা না থাকায় সার্কাসের আকর্ষণও অনেক কমে গিয়েছে। এখন আমাদের মূল আকর্ষণ এই নাইজিরীয়দের জিমন্যাস্টিক্স।’’
হ্যারিসন জানান, কেনিয়ায় তাঁরা হোটেলে জিমন্যাস্টিক্স দেখাতেন। ভারতে সার্কাসে অংশ নিলে উপার্জন অনেকটাই বেশি হবে, এই আশায় এ দেশে আসেন মাস ছয়েক আগে। ওই যুবকের কথায়, ‘‘প্রথম দিকে দেশ আর বাড়ির কথা ভেবে মন কেমন করত। এখন এ দেশ থেকে চলে যেতে হবে ভেবে খারাপ লাগছে। সার্কাসের অন্য সঙ্গীরাও খুব আন্তরিক।’’
অ্যালেক্স জানালেন, প্রাথমিক ভাবে কথাবার্তায় ভাষাগত সমস্যা হত। তবে গত ছ’মাসে তাঁরা কিছুটা বাংলা ও হিন্দি শিখেছেন। এখন ওই দুই ভাষাই ভাঙা ভাঙা বলতে পারেন। এখানকার মানুষদের হাতের রান্না খেতেও ভাল লাগে তাঁদের। আর অ্যান্ড্রু জানান, এখানকার মতো এত মশলা দিয়ে তাঁরা মাংস রান্না করেন না। বেশি ভালবাসেন সেদ্ধ মাংস খেতে। তবে সার্কাসের বন্ধুরা মশলা দিয়ে মাংসের ঝোল রান্না শিখিয়েছেন। সেটা খুবই ভাল খেয়েছেন তাঁরা।
সার্কাসের ছোট ছোট তাঁবুতে লোহার দু’টো ফোল্ডিং খাট পাতা। সেখানেই শোয়ার ব্যবস্থা। তাঁবুর বাইরে একটা ছোট জায়গায় রান্নাবান্না। বাড়ি ছেড়ে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটানো কষ্টদায়ক, মানছেন ওঁরা। তবে গত কয়েক মাসে সয়ে গিয়েছে সেই কষ্ট।
হ্যারিসন আরও জানালেন, সার্কাসের খেলা দেখাতে তাঁরা শহরে, গ্রামে ঘুরেছেন। বাজার করতে বা দৈনন্দিন অন্য কাজে বেরিয়ে দেখেছেন, প্রয়োজনে অকুণ্ঠ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এলাকার মানুষজন।
এই ভালবাসা ও আন্তরিকতা ছেড়ে নিজের দেশে চলে যেতে হবে তিন মাস পরেই। তিন জিমন্যাস্ট একযোগে জানিয়ে দেন, যেতে হবে ঠিকই। তবে তাঁরা খেলা দেখাতে ফের ভারতে ফিরে আসতে চান।