Social Media Obsession

তারকা হতেই জ্যান্ত মুরগি ছিঁড়ে খাওয়ার ভিডিয়ো! অভিযুক্ত তিন

গত ১৩ এপ্রিল সৌমেন চৌধুরী নামে একটি ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে ভিডিয়োটি আপলোড করা হয়। ইতিমধ্যে তাতে হাজারেরও বেশি কমেন্ট পড়েছে, ‘লাইক' হাজার ছুঁই ছুঁই।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ০৬:৪২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কেউ ভিডিয়ো করতে করতেই দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে ঝাঁপ দিচ্ছেন। কেউ শৌচাগারে স্নানের ভিডিয়ো তুলছেন। কেউ বা গাছের পাতা চিবিয়ে খাওয়ার বা স্ত্রীকে কামড়ানোর ভিডিয়ো তুলছেন নির্দ্বিধায়। অভিযোগ, এর পরে প্রচার ও মোটা টাকা আয়ের হাতছানিতে সমাজমাধ্যমে সে সব ‘আপলোড’ও করে দেওয়া হচ্ছে। তবে, এ সব কিছুকেই মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের একটি ভিডিয়ো ছাপিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

গত ১৩ এপ্রিল সৌমেন চৌধুরী নামে একটি ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে ভিডিয়োটি আপলোড করা হয়। ইতিমধ্যে তাতে হাজারেরও বেশি কমেন্ট পড়েছে, ‘লাইক' হাজার ছুঁই ছুঁই। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি মুরগিছানাকে ধরে এক কিশোর পাখনা ছাড়াতে ছাড়াতে বলছে, ‘আমার কাছে এটা কোনও ব্যাপার নয়’! এর পরে চিৎকার করতে থাকা মুরগিছানার পেটে কামড় বসাচ্ছে সরাসরি। সেটির পা টেনে ছিঁড়ে ফেলে সেই পায়ের অংশ মুখেও পুড়ছে নির্দ্বিধায়! ভিডিয়োটি দেখে এর পরে ১০ মে ‘পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস’ (পেটা) জঙ্গিপুর পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। সেখানকার সুতি থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৯ (পঞ্চাশ টাকা বা তার বেশি দামের পশু হত্যা) এবং ৩৪ (একাধিক জনের সঙ্গে মিলে অপরাধ সংঘটিত করা) ধারার পাশাপাশি ‘দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যাল’ আইন, ১৯৬০-এর ১১(১)(এ) ধারা (পশু অত্যাচার), ১১(১)(এল) ধারা (পশুহত্যা এবং মারধরের জেরে পশুর পঙ্গু হয়ে যাওয়া) এবং ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এফআইআর রুজু করা হয়। পুলিশ দুই নাবালক-সহ মোট তিন জনকে ধরে। নাবালকদের সরকারি হোমে পাঠানো হয়েছে। জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ায় জামিন পান অপর প্রাপ্তবয়স্ক।

যদিও পেটা-র তরফে সালোনি সাকারিয়ার দাবি, প্রাণীদের উপরে এমন অত্যাচারের প্রবণতা অন্য অপরাধের পথ প্রস্তুত করে। গবেষণা বলছে, এমন অত্যাচারকারীরাই তিন গুণ বেশি হারে পরবর্তীকালে খুন, ধর্ষণের মতো অন্য অপরাধে যুক্ত হন। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বললেন, ‘‘যে কোনও মূল্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার পাওয়ার এই চেষ্টা এমন সব কাজের জন্ম দিচ্ছে। মানসিক বিকৃতির থেকেও বেশি, এটা হল না-ভেবে করা কাজ। যেখানে কী থেকে কী ঘটতে পারে, সেই বোধটাই থাকছে না।’’

Advertisement

মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেলের আবার বক্তব্য, ‘‘ভিডিয়োর কিশোরের থেকেও আমি বেশি চিন্তিত সমাজের অন্যদের নিয়ে। যাঁরা খুব চিন্তা করেন বা অ্যাংজ়াইটিতে ভোগেন, তাঁদের উপরে এই ধরনের ভিডিয়োর প্রভাব যথেষ্ট নেতিবাচক।’’ এই কারণেই সোশ্যাল মিডিয়ার এই সমস্ত ভিডিয়োর উপরে কড়া নজরদারি চান তিনি।

পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও বললেন, ‘‘প্রতিনিয়ত এমন ভিডিয়ো পাচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারকা হওয়ার তাড়নায় বহু ক্ষেত্রেই কুকুর, বেড়াল, পাখিদের নিশানা করা হচ্ছে। কিন্তু শাস্তি এ ক্ষেত্রেও সেই পুরনো আইন। ৫০ টাকা বা তার বেশি মূল্যের পশুর ক্ষেত্রে অত্যাচার হলে তা আইনে বিচার্য। তবে সে ক্ষেত্রেও তো সর্বোচ্চ জরিমানা মাত্র ৫০ টাকা!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement