Oil Tanker

উল্টে গেল ট্যাঙ্কার, চাপা পড়ে মৃত তিন

বৃহস্পতিবার ভোরে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে একবালপুর থানা এলাকার ময়ূরভঞ্জ রোডে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২১ ০৬:৪২
Share:

মর্মান্তিক: তেলের ট্যাঙ্কারের তলায় পিষে ময়ূরভঞ্জ রোডের এই জায়গাতেই (বাঁ দিকে) মৃত্যু হয় তিন যুবকের। পড়ে রয়েছে তাঁদের মোটরবাইক (ডান দিকে)। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ভোরে তখনও রাস্তার দু’ধারের দোকানপাট খোলেনি। আচমকাই বিকট একটি শব্দ পেয়েছিলেন আশপাশের লোকজন। ছুটে এসে তাঁরা দেখেন, উল্টে গিয়েছে একটি তেলের ট্যাঙ্কার। তার নীচে ঢুকে গিয়েছেন একটি মোটরবাইক-সহ তিন তরুণ। ট্যাঙ্কার থেকে তেল গড়িয়ে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। ওই বাসিন্দারাই পুলিশে খবর দেন। দ্রুত পৌঁছয় পুলিশ। নিয়ে আসা হয় ক্রেন। ট্যাঙ্কারটি সরিয়ে তার নীচ থেকে তিন তরুণকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তিন জনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ভোরে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে একবালপুর থানা এলাকার ময়ূরভঞ্জ রোডে। মৃতদের নাম মহম্মদ সমীর আহমেদ (২৩), মহম্মদ রাশিদুর রহমান (২০) এবং মহম্মদ আকিল (২০)। ঘটনার পরেই পালান ট্যাঙ্কারের চালক। এই দুর্ঘটনার পরে উত্তেজিত বাসিন্দারা পথ অবরোধ করেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই এলাকায় গভীর রাতে এবং ভোরের দিকে বেপরোয়া গতিতে ভারী গাড়ি চলাচল করে। চালকদের একাংশ কোনও নিয়ম মানেন না। পাশাপাশি, যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশি নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়েরা। বেশ কিছু ক্ষণ অবরোধ চলার পরে পুলিশ গিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। এক পুলিশকর্তা জানান, ওই এলাকায় নজরদারি থাকে। তা আরও কঠোর করা হবে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তেলের ট্যাঙ্কারটি ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে তারাতলার দিকে যাচ্ছিল। ডায়মন্ড হারবার রোড এবং ময়ূরভঞ্জ রোডের মোড় থেকে গাড়ি ঘোরাতে যান চালক। তখনও কোনও ভাবে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারান। ট্যাঙ্কারটি এক দিকে কাত হয়ে উল্টে যায়। ধাক্কার চোটে এক দিকে হেলে যায় ফুটপাতের একটি বাতিস্তম্ভও। দু’-একটি দোকানও অল্পবিস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশের অনুমান, বাইক নিয়ে সমীর এবং তাঁর দুই বন্ধু সেই সময়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৈত্যাকৃতি ট্যাঙ্কারটি তাঁদের ঘাড়ের উপরে পড়ে। ট্যাঙ্কারের নীচে বাইক-সহ ঢুকে যান তিন জন। দুর্ঘটনার অভিঘাতে প্রায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে বাইকটিও। ট্যাঙ্কারের চালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

Advertisement

মহম্মদ সমীর আহমেদ (বাঁ দিকে) , মহম্মদ আকিল (ডান দিকে)

এ দিকে, এলাকার তিন তরুণের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়েরা। তাঁরাই জানালেন, ময়ূরভঞ্জ রোডে বাড়ি সমীরের। তাঁর মা কামরুন্নিসা জানান, তাঁর দুই ছেলে। তিনি একটি বিউটি পার্লার চালান। সমীর কোনও কাজ করতেন না। এ দিন ভোরে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। বেলার দিকে বাড়িতে দুর্ঘটনার খবর আসে। বড় ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার অবস্থায় নেই কামরুন্নিসা।

সমীরের বাড়ি থেকে কিছু দূরেই ভূকৈলাস রোডে থাকতেন আকিল। তাঁর এক আত্মীয় জানান, আকিল একটি কল সেন্টারে কাজ করতেন। নাইট ডিউটি সেরে রোজ ভোরে বাড়ি আসতেন। কিন্তু এ দিন সকাল হয়ে গেলেও তিনি না ফেরায় চিন্তায় পড়ে যান বাড়ির লোক। পরে তাঁরা সব জানতে পারেন। রাশিদুরের পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, এ দিন কর্মস্থল থেকে শাহ আমান লেনের বাড়িতে ফিরছিলেন রাশিদুর। মাঝপথে ঘটে দুর্ঘটনা। তিন পরিবারের তিন
তরুণের এমন পরিণতিতে শোকে মূহ্যমান গোটা এলাকা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement