একই রাস্তায় ২০ জনের ডেঙ্গি, পুর নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ

এই পরিস্থিতি কলকাতা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের সিঁথি থানা এলাকার গোপালচন্দ্র বোস লেন এবং ডি গুপ্ত লেনের।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২১
Share:

গোপালচন্দ্র বসু লেনে খোলা নর্দমায় জমেছে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

প্রায় ২০ ফুট চওড়া রাস্তার দু’ধারে পরপর বাড়ি। সেই এলাকায় ২০০ মিটারের মধ্যে ২০ জনের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ করছেন বাসিন্দারা। পুরসভার হিসেব অবশ্য বলছে, সংখ্যাটা ১২-১৩। এই পরিসংখ্যান গত ২০ দিনের। আক্রান্তদের আট জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চার জন এখনও হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। এই পরিস্থিতি কলকাতা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের সিঁথি থানা এলাকার গোপালচন্দ্র বোস লেন এবং ডি গুপ্ত লেনের।

Advertisement

২৬ সেপ্টেম্বর জ্বর নিয়ে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫এ, গোপালচন্দ্র বোস লেনের বাসিন্দা আলপনা মান্না। পরিবার সূত্রের খবর, তাঁর প্লেটলেট সাত হাজারে নেমে গিয়েছিল। দশমীর রাতে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। দশমীর বিকেলেই মামার বাড়িতে পুজোর ছুটি কাটাতে আসা আলপনাদেবীর নাতি গৌরব মণ্ডলকে একই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। বছর ষোলোর ওই কিশোর এখনও চিকিৎসাধীন। ৩/৩টি, ডি গুপ্ত লেনের বাসিন্দা লোকবাহাদুর মল্লা এবং তাঁর স্ত্রী গীতা মল্লা, দু’জনেই ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছেলে বরুণ মল্লা জানাচ্ছেন, এলাকায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। ৭/বি গোপালচন্দ্র বোস লেনের বাসিন্দা শৌভিক মান্নাও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তাঁর অবশ্য বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে। ৬সি/১-এর বাসিন্দা দুই ভাই-বোন সৌভিক ও পৌলোমী কর্মকার ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এ ছাড়াও আক্রান্তের তালিকায়

রয়েছেন সুমিতা সাহা, শ্যামলী কৈরাই-সহ আরও অনেকে।

Advertisement

বাসিন্দাদের অভিযোগের আঙুল স্থানীয় কাউন্সিলরের দিকে। তাঁদের অভিযোগ, “এক মাসের কম সময়ের মধ্যে এমন পরিস্থিতি হল। অথচ পুরসভা সে ভাবে কোনও পদক্ষেপই করল না। সব শুনেও একবারের জন্যও এলাকায় আসেননি স্থানীয় কাউন্সিলর পুষ্পালী সিংহ!” তাঁদের দাবি, কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানিয়ে গত ১১ অক্টোবর ৫৮ জন বাসিন্দার স্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র জমা করা হয়েছে।

সোমবার পুষ্পালীদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখন ছুটিতে রয়েছেন। তবে সমস্যার কথা শুনেছেন। আক্রান্তদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওয়ার্ডের কর্মীদের। তবে তিনি যে এলাকায় যাননি, তা মেনে নিয়েছেন পুষ্পালীদেবী। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধানমাঠ সংলগ্ন কয়েক বিঘা পরিত্যক্ত জমি এবং সিঁথি থানার পর থেকে শুরু হয়ে গোপালচন্দ্র বসু লেনের পাশ দিয়ে অ্যালবার্ট ডেভিড পর্যন্ত যাওয়া খোলা নর্দমার জন্যই এলাকায় মশার

উপদ্রব বেড়েছে।

পুরসভা ওই দু’টি জায়গায় সাফাই করে না বা মশা মারার অভিযান চালায় না কেন? এ বিষয়ে পুষ্পালীদেবীর থেকে কোনও সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি। ঠিক কোন জায়গা নিয়ে বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, তা ঠিক বুঝতে পারছেন না বলেও

জানান তিনি।

কলকাতা পুরসভার এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, “এই পরিস্থিতি হবে কেন? পুরকর্মীদের কাজের গাফিলতি যদি হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই কড়া পদক্ষেপ করা উচিত আমাদের। সেই সঙ্গে কোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মালিকানাধীন বাড়ি বা জমি যদি ডেঙ্গি মশার উৎসস্থল হয়, তবে তাঁদের বিরুদ্ধেও পুর আইন মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।” পাশাপাশি তিনি জানান, দিন তিনেক আগে ওই এলাকায় ডেঙ্গির খবর পেয়েই বরোর র‌্যাপিড অ্যাকশন দলকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement