Swasthya Sathi

‘বাধ্য’ হয়েই কি স্বাস্থ্যসাথীতে নাম নতুন ২০ হাসপাতালের

কুড়ির মধ্যে কুড়ি! কিন্তু তাতেও খুব একটা স্বস্তিতে থাকতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতর বা রাজ্য সরকার।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

কুড়ির মধ্যে কুড়ি! কিন্তু তাতেও খুব একটা স্বস্তিতে থাকতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতর বা রাজ্য সরকার।

Advertisement

আগে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আসার জন্য অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালকে বহু অনুরোধ করতে হত। সেখানে কার্যত বিনা অনুরোধেই চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে নতুন করে ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথীর অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু তার পরেও একে বড় সাফল্য হিসেবে দেখাতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, স্বাস্থ্যসাথীর বিভিন্ন প্যাকেজের খরচ বাড়ানোর জন্য বেসরকারি তরফ থেকে আসা ক্রমবর্ধমান চাপ।

‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে মানুষ সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন স্বাস্থ্যসাথী-র কার্ড করানোর ব্যাপারে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির একটা বড় অংশের আশঙ্কা, এই প্রকল্পে বিভিন্ন চিকিৎসার বেঁধে দেওয়া খরচ না বাড়িয়ে সকলকে কার্ড বিলি করায় স্বাস্থ্য পরিষেবাই পুরোপুরি বেলাইন হয়ে যেতে পারে।

Advertisement

এর পরেও ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম এই প্রকল্পে যুক্ত হতে চেয়ে আবেদন করেছে। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বর্ষে এখনও পর্যন্ত অর্থাৎ গত পয়লা এপ্রিল থেকে ২০ ডিসেম্বর— এই সময়ে ৭৬টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে মেডিকা, কোঠারি, স্পন্দনের মতো বেশ কিছু বড় ও মাঝারি মাপের হাসপাতাল। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৩০টি বেসরকারি হাসপাতাল, অগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২৬টি।

কিন্তু প্রকল্পে লাভ না দেখলে হঠাৎ এত হাসপাতাল একই সঙ্গে আগ্রহী হল কেন?

রাজ্যের প্রায় ১৫০০ হাসপাতাল ও নার্সিংহোম মালিকদের সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটালস অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, ‘‘বাধ্য হয়ে নথিভুক্ত হতে হচ্ছে। কারণ, যে হারে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড বিলি হচ্ছে, তাতে রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষের এই কার্ড থাকবে। তাই এই প্রকল্পে না থাকলে হাসপাতালগুলি কার্যত রোগীই পাবে না।’’

তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘যখন মাঝারি বা ছোট নার্সিংহোমে অসংখ্য রোগী স্বাস্থ্যসাথী-র কার্ড নিয়ে ভিড় করবেন আর শয্যা বা পরিকাঠামোর অভাবে অনেককে ভর্তি নেওয়া যাবে না, সমস্যা দেখা দেবে তখন। যে সব প্যাকেজে খরচ খুব কম, সেই ক্ষেত্রে রোগী প্রত্যাখ্যান আরও বেশি হবে। এখনই বিভিন্ন নার্সিংহোমের মালিকেরা এই আশঙ্কায় ভুগছেন।’’

আলহাজউদ্দিন জানান, বিনোদকুমার স্বাস্থ্যসচিব থাকাকালীনই তাঁরা স্বাস্থ্যসাথীর প্যাকেজের খরচ বাড়়ানো নিয়ে লাগাতার চিঠি দিয়েছিলেন। গত ৯ ডিসেম্বর বর্তমান স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের সঙ্গে দেখা করে একই আর্জি জানিয়ে ফের চিঠি দিয়েছেন। রাজ্য চেয়ারম্যানের কথায়, ‘‘আইসিইউয়ের ক্ষেত্রে প্রতিদিন মাত্র ১৫০০ টাকা, মেডিসিনের চিকিৎসায় রোজ ৭৫০ টাকা—এই ভাবে পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব।’’

স্বাস্থ্যসাথীতে নথিভুক্ত প্রথম সারির একটি হাসপাতালের পরিচালন কমিটির সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক কুণাল সরকারও বলেন, ‘‘যে হেতু এখন ৬০ শতাংশ লোকের হাতে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড রয়েছে, তাই কোনও হাসপাতালই এই প্রকল্প থেকে আলাদা হয়ে থাকতে চাইবে না। কারণ, সে ক্ষেত্রে তাদের ব্যবসা মার খাওয়ার প্রভূত আশঙ্কা। কিন্তু পরবর্তীকালে অধিকাংশ হাসপাতালই চেষ্টা করবে, যে প্যাকেজগুলি আর্থিক ভাবে পোষাচ্ছে সেগুলির রোগী ভর্তি করতে আর কম প্যাকেজের রোগী এড়িয়ে যেতে।’’

কুণালবাবুর মত, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পে যেমন হাসপাতালগুলির প্যাকেজ বেছে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে, স্বাস্থ্যসাথীতেও তেমন ব্যবস্থা করা উচিত সরকারের। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘‘এখনও এই সব ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা একটা নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। আলোচনা এবং পরিমার্জন চলতে থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement