বিজ্ঞাপন দিয়ে কচ্ছপ বিক্রি, ধৃত

বন দফতর জানাচ্ছে, শেষমেশ শুক্রবার রাতে ডানলপে হানা দিয়ে পাকড়াও করা হয়েছে দুই কচ্ছপ বিক্রেতাকে। তাঁদের নাম রোহনরঞ্জন ঘোষ এবং সৌরভ হালদার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০০:২৪
Share:

উদ্ধার হওয়া ইন্ডিয়ান স্টার টরটয়েজ। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে চমকে উঠেছিলেন বন দফতরের এক অফিসার। ফলাও করে লেখা রয়েছে, বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপের ক্রেতা চাই! সেই সূত্র ধরেই শুরু হয় খোঁজ। কাজে লাগানো হয় বন্যপ্রাণ শাখার ‘সোর্স’দেরও। বন দফতর জানাচ্ছে, শেষমেশ শুক্রবার রাতে ডানলপে হানা দিয়ে পাকড়াও করা হয়েছে দুই কচ্ছপ বিক্রেতাকে। তাঁদের নাম রোহনরঞ্জন ঘোষ এবং সৌরভ হালদার। উদ্ধার করা হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান স্টার টরটয়েজ’ প্রজাতির ৫৪টি কচ্ছপ। এগুলি পোষ্য হিসেবে বিক্রির করার জন্যই আনা হয়েছিল বলে ধৃতেরা জানিয়েছে।

Advertisement

বন্যপ্রাণ শাখার উপ-বনপাল ওম প্রকাশ জানান, ধৃতেরা কলেজ ছাত্র। বেশি রোজগারের জন্য বন্যপ্রাণ কেনাবেচায় নেমেছিলেন। কার থেকে এগুলি কেনা হয়েছিল জানতে ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে।

এই গ্রেফতারির পরেও বন দফতরের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তাঁরা বলছেন, এমন চক্রের খোঁজ দু’বছর আগেও মিলেছিল। সে সময়ে সোদপুরের দুই যুবকের কাছ থেকে দেশি কচ্ছপ ছাড়াও আমেরিকার ‘রে়ড ইয়ার্ড স্লাইডার’ প্রজাতির কচ্ছপও পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলিও পোষ্য হিসেবে বিক্রি করার জন্য আনা হয়েছিল। সে সময়ে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত হিসেবে মুম্বই, চেন্নাই এবং বাংলাদেশের কারবারিদের নামও জানতে পেরেছিল পুলিশ। কিন্তু সেই সব তথ্য ফাইল চাপা পড়েছিল। ফলে মূল চক্রীদের কাউকেই ধরা যায়নি।

Advertisement

বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ডানলপের কারবারিরাও মুম্বই থেকেই এই কচ্ছপ এনেছে। ফলে দু’টি চক্রের মধ্যে যোগসূত্র থাকতেই পারে। বন দফতরেরই এক অফিসার বলছেন, ‘‘সে সময়ে তদন্তের গতি থামিয়ে না দিলে এই সব চক্র আগেই ধরা প়ড়ত। যে কোনও তদন্ত মাঝপথে বন্ধ করা বন দফতরের যেন সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে।’’ যদিও বন দফতরের কর্তাদের দাবি, কোনও তদন্তই মাঝপথে থামানো হয়নি। মুম্বই, চেন্নাইয়ে খোঁজ করা হলেও কারবারিদের হদিস মেলেনি।

বন্যপ্রাণপ্রেমীদের অনেকেই বলছেন, কলকাতা ও লাগোয়া এলাকা বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত চোরা কারবারের কেন্দ্র হয়ে উঠছে। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায় হানা দিয়ে ট্রাক ভর্তি কচ্ছপ উদ্ধার করেছে সিআইডিও। বন দফতরের খবর, ‘সফট শেল টার্টল’ প্রজাতির কচ্ছপ নদীর ধারে থাকে। মূলত খাদ্য হিসেবে এ রাজ্যে নিয়ে আসা হয়। ট্রাকে চাপিয়ে পাচারের পথে সেগুলি ধরা প়়ড়ে। এর আগে একাধিক বার সাপের বিষ উদ্ধার হয়েছে। গত সোমবারও মধ্য কলকাতার ওল্ড চায়না বাজারের চারটি পাইকারি দোকানে হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের বন্যপ্রাণ অপরাধদমন শাখা (ডব্লিউসিসিবি) এবং রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার যৌথ দল। চার জনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি ৩২ হাজার ৯৮৫টি বেজির লোমের তুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

ডব্লিউসিসিবি সূত্রে খবর, এক সময়ে ফলতার বঙ্গনগর বেজির লোমের ব্যবসার জন্য পরিচিত ছিল। ২০১২ সাল থেকে বারবার হানা দেওয়ায় সেই ব্যবসায় কিছুটা রাশ টানা গিয়েছে। কিন্তু খাস শহরের দোকানে এই নিষিদ্ধ জিনিস বিক্রি হচ্ছে। তদন্ত নেমে বন্যপ্রাণ শাখা জানতে পেরেছে, ভিন রাজ্য থেকেও বেজির লোমের তুলি আসছে। সেই কারবারিদের খোঁজ চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement