—প্রতীকী ছবি
ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। পঠনপাঠন সবই এখন অনলাইনে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কলকাতার কলেজগুলিতে অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়াদের হাজিরা, সশরীরে ক্যাম্পাসে হাজিরার তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। যার অর্থ, স্বাভাবিক সময়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে যত পড়ুয়া সশরীরে আসতেন, তার চেয়ে অনেক বেশি ছাত্রছাত্রী অনলাইনে ক্লাস করছেন।
কিন্তু, শহর থেকে বেরোলেই বদলে যাচ্ছে ছবিটা। সেখানে সশরীরে যত হাজিরা হত, তার চেয়ে কম সংখ্যক পড়ুয়া ক্লাস করছেন অনলাইনে। এর পিছনে গ্রামবাংলার ছাত্রছাত্রীদের কাছে স্মার্টফোন বা অনলাইন ক্লাসের অন্য ব্যবস্থা না থাকাকেই দায়ী করছেন শিক্ষকেরা। এক দিকে পড়ুয়াদের স্মার্টফোন-ল্যাপটপ না থাকা, অন্য দিকে দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবার অভাব— দুইয়ে মিলে অসুবিধার সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন মহলে তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
কলকাতার বেশ কিছু কলেজের অধ্যক্ষেরা জানিয়েছেন, তাঁদের কলেজে সশরীরে ক্লাসে আসার থেকে অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়াদের হাজিরা বেশি। মৌলানা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্তের কথায়, ‘‘এখন সারা দিনে সুবিধা মতো ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ক্যাম্পাসের দশটা-পাঁচটার বাঁধা নিয়ম নেই। তাই হয়তো আগ্রহ বেশি।’’ একই দাবি সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল করের। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে বসে সুবিধাজনক সময়ে ক্লাস করতে পারছেন পড়ুয়ারা। তাই হয়তো হাজিরা বেড়েছে।’’
নিউ আলিপুর কলেজেও একই চিত্র বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গী। চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায় জানালেন, আগে দেড়শো ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ক্লাসে আসতেন বড়জোর ৩০ জন। কিন্তু অনলাইন ক্লাসে সেই সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা অনলাইন ক্লাসে স্রেফ হাজিরাই দিচ্ছে না। আগ্রহ নিয়ে পড়ছেও।’’
মৌলানা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষের দাবি, তাঁর কলেজের কয়েক জন ছাত্রছাত্রীর প্রথম দিকে দ্রুত গতির ইন্টারনেট নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। পরে মিটে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কলেজ ক্যাম্পাসের যে প্রাণ, সেটা তো অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না।’’ তবে উত্তর কলকাতার মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত জানান, তাঁর কলেজে অনলাইন ক্লাসে হাজিরা বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি কলেজে অবশ্য অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়াদের হাজিরার চিত্র খুব আশাব্যঞ্জক নয়। ক্যাম্পাসে যত পড়ুয়া আসতেন, তার তুলনায় কমই আসছেন অনলাইনে। নামখানার শিবানী মণ্ডল মহাবিদ্যালয়ের টিচার ইন-চার্জ দয়ালচাঁদ সর্দার জানান, পড়ুয়ারা ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যায় সব চেয়ে বেশি ভুগছেন। হোয়াটসঅ্যাপে স্টাডি মেটিরিয়াল দিয়ে গুগল মিটে ক্লাস শুরু করা হলেও এখনও পর্যন্ত তা খুব সফল হয়নি।
মহেশতলা কলেজের অধ্যক্ষা রুম্পা দাস জানান, তাঁর কলেজের অনেক পড়ুয়ার এখনও স্মার্টফোন নেই। আর ইন্টারনেটের খরচ বহনের ক্ষমতাও নেই তাঁদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনারই বিদ্যানগর কলেজেও ক্যাম্পাসে যত ছাত্রছাত্রী এসে পঠনপাঠনে অংশ নিতেন, তার তুলনায় অনলাইন ক্লাসে হাজিরা আশাপ্রদ নয় বলেই জানালেন অধ্যক্ষ সূর্য আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘অনেক ছাত্রছাত্রীরই এখনও স্মার্টফোন নেই। যে অঞ্চলে তাদের বাড়ি, সেখানে নেই দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবাও।’’