বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিকে) সুমন্ত্র বসু ও সুগত বসু। রবিবার, নেতাজি ভবনে। নিজস্ব চিত্র
দেশের ইতিহাস নিয়ে মিথ্যা এবং ভুয়ো খবরের বাড়বাড়ন্তে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর নায়কদের জীবন নিয়ে প্রামাণ্য তথ্য চর্চাই জরুরি। রবিবার, এ দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছরেনেতাজি রিসার্চ বুরোর অনুষ্ঠানে এই বার্তা উঠে এল।
এলগিন রোডে সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের বাড়িটিতে নেতাজির জীবনের নানা দিক নিয়ে ইংরেজিতে একটি প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। ‘নেতাজি’ (সুভাষচন্দ্র বসু’জ লাইফ পলিটিক্স অ্যান্ড স্ট্রাগল)-শীর্ষক বইটির লেখক সুভাষচন্দ্রের ভ্রাতুষ্পুত্র বধূ প্রয়াত কৃষ্ণা বসু। সংকলনের ১৮টি প্রবন্ধের মধ্যে ১৩টিই মূল বাংলা থেকে অনুবাদ করেন কৃষ্ণা ও শিশিরকুমার বসুর ছোট ছেলে তথা নেতাজি রিসার্চ বুরোর অধিকর্তা সুমন্ত্র বসু। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানবিদ সুমন্ত্রই বইটির সম্পাদনা করেছেন।
সুভাষের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, জার্মানি থেকে জাপান পর্যন্ত সাবমেরিনে সফরসঙ্গী আবিদ হাসানের কথা এবং ঝাঁসির রানি বাহিনীর বীরাঙ্গনাদের নিয়ে বইয়ের দু’টি প্রবন্ধের অংশ পড়ে শোনান কৃষ্ণা-শিশিরের বড় ছেলে, ইতিহাসবিদ (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) সুগত বসু। এ বইয়ের মুখবন্ধে সুমন্ত্র লিখেছেন, ১৯৩০-এর দশকে কলকাতায় জাত কৃষ্ণা বা তাঁর সমসাময়িকদের জীবনে গভীর ভাবে মিশে গিয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ইতিহাসের সেই পর্বান্তর। সুমন্ত্রের কথায়, “মায়ের প্রথম জীবনের স্মৃতিকথা ‘লস্টঅ্যাড্রেসেস: আ মেমোয়ার অব ইন্ডিয়া ১৯৩৪-৫৫’, বইটি দেখে অবাক লাগে। ওই সময়ের এক জন সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের কিশোরীর ব্যক্তিগত স্মৃতিতে আসলে ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই। সবই দেশের কথা!”
কৃষ্ণার বাংলা বই ‘ইতিহাসের সন্ধানে’ সুভাষের রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রামের ইউরোপ পর্বটিকে ভ্রমণকাহিনির আদলে তুলে ধরে। আর একটি বই ‘চরণরেখা তব’-য় রয়েছে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় সুভাষের সংগ্রামগাথা। এই বইয়ের প্রবন্ধের মধ্যে মূল বাংলায় লেখাগুলি রয়েছে ‘প্রসঙ্গ সুভাষচন্দ্র’ বইটিতেও। ইংরেজি প্রবন্ধ সংকলনটিতে সুভাষ-জীবনে প্রভাব ফেলা নারী তাঁর গর্ভধারিণী মা প্রভাবতী, দেশবন্ধুজায়া বাসন্তী, মেজদা শরৎচন্দ্র বসুর স্ত্রী বৌদিদিবিভাবতী এবং সুভাষের স্ত্রী এমিলি শেঙ্কেলের কথা রয়েছে। সুভাষের সঙ্গে নেহরু, হিটলার প্রমুখের সম্পর্ক নিয়ে একটি অংশ অনেকের নানা ভুল ধারণা বা ইতিহাসের অপব্যাখ্যা দূর করবে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদেরা। আজাদ হিন্দ ফৌজ বা সংগ্রামেরঅন্য পর্বে সুভাষের সহযোগী সিরিল জন স্ট্রেসি, মহম্মদ জমান কিয়ানি,মিয়াঁ আকবর শাহ প্রসঙ্গ থেকে উঠে এসেছে রণাঙ্গনে যুদ্ধে বা বন্ধুতায় সুভাষের নারী বিষয়ক ধারণার মতো তাৎপর্যবাহী বিষয়ও। প্রেসিডেন্সি কলেজে সুভাষের অধ্যাপক, বিতর্কিত নিগ্রহ-কাণ্ডের চরিত্র অধ্যাপক ওটেনের সঙ্গে ইংলন্ডে দেখা ও কথা হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়েও কৃষ্ণা লিখেছেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ প্রাপ্তি আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গীত পরিচালক রাম সিংহ ঠাকুরের কণ্ঠে সুভাষ-বাহিনীর বিভিন্ন গানের রেকর্ডিং শোনা। সিঙ্গাপুরে ফৌজের নেতৃত্বে বৃত সুভাষের হিন্দুস্থানি বক্তৃতার রেকর্ড শুনেও রোমাঞ্চিত সভাঘর। সুভাষের মূল্যবোধের উত্তরাধিকার দেশকে পৌঁছে দেওয়াই সময়ের দাবি, জানান সুগত বসু।