তারকচন্দ্র আচার্য
যাঁদের হাতে নিগৃহীত হয়ে পরিবারের লোকের মৃত্যু হয়েছে, জনরোষ থেকে বাঁচাতে তাঁদেরই বাড়িতে আশ্রয় দিল মৃতের পরিবার।
প্রতিদিন দুপুরে পথকুকুরদের খাওয়াতে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সামনে পৌঁছে যেতেন তিনি। পেশায় গাড়িচালক মানুষটিকে দেখতে পেলেই জড়ো হয়ে যেত কুকুরগুলি। বৃহস্পতিবার তিনি দেখেন, কয়েক জন ওই কুকুরদের দিকে ইট ছুড়ছে, লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করছে। এর প্রতিবাদ করলে ওই ব্যক্তির উপরে কয়েক জন চড়াও হয় বলে অভিযোগ। শুরু হয় বচসাও। অভিযোগ, সেই সময়ে কেউ তাঁর বুকে ঘুষি মারলে তিনি অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
জগদ্দল থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম তারকচন্দ্র আচার্য (৫৬)। ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের কাছেই তাঁর বাড়ি। এলাকায় তিনি কুকুরপ্রেমী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মহম্মদ আরিফ ও মহম্মদ মুস্তাকিম নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। তাদের পুলিশি হেফাজতেও নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ব্যারাকপুর মর্গে তারকবাবুর দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে তারকবাবুর মৃত্যুর খবর জানাজানি হতে এলাকায় হইচই শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতেই স্থানীয়েরা অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন। সে সময়ে গণপিটুনির হাত থেকে বাঁচাতে ওই দুই যুবককে তারকবাবুর পরিবারই নিজেদের বাড়িতে প্রথমে আশ্রয় দেয়। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
তারকবাবুর ছেলে তমাল জানান, ঘটনার দিন বিকেলে তাঁর বাবা বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তমাল বলেন, ‘‘বাবা এক বন্ধুর বাড়ি যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন। যাওয়ার সময়ে রাস্তায় কুকুরদের বিস্কুট খাওয়াচ্ছিলেন।
সেই সময়ে কয়েকটি কুকুরকে ইট মারার ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাঁকে আক্রমণ করা হয়। বাবার হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা ছিল। বুকে ঘুষি লাগলে তিনি অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান।’’
প্রতিবেশীরা জানান, তারকবাবু অনেক দিন ধরেই কুকুর-বেড়ালের পরিচর্যা করছেন। তাঁর বাড়িতেও বেশ কয়েকটি বেড়াল রয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, কুকুরকে ঢিল ছুড়তে দেখে তারকবাবু ওই যুবকদের বারণ করেছিলেন। কিন্তু তারা পাল্টা তাঁকে আক্রমণ করে। ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সামনেই ঘটে ওই ঘটনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠটি দুপুর ও বিকেলের পরে শুনশান হয়ে যায়। তখন সেখানে মদ-জুয়ার আসর বসে, দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও বাড়ে। ওই মাঠের অদূরে তারকবাবুর উপরে আক্রমণ হয়। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ধৃতদের সম্বন্ধেও খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ।