Polio Vaccine

Polio: পোলিয়ো টিকায় সব শেষে কলকাতা

কলকাতা ছাড়াও দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো জেলায় শিশুদের রুটিন টিকাকরণের বেহাল দশা।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২২ ০৫:২৪
Share:

প্রদীপের নীচেই অন্ধকার!

Advertisement

পোলিয়ো-সহ রুটিন টিকাকরণে রাজ্যের মধ্যে নিম্নতম স্থানে থাকা কলকাতার অবস্থা বোঝাতে এই বহু ব্যবহৃত শব্দবন্ধের বিকল্প খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি রিপোর্টই বলছে, কলকাতার ২, ৮, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ বরোয় পোলিয়ো টিকাকরণের হার উদ্বেগজনক ভাবে কম। আর খুব কম টিকাকরণের তালিকায় থাকা ১৫ নম্বর বরোরই নর্দমার জলে সম্প্রতি পোলিয়োর ভিডিপিভি টাইপ-১ ভাইরাস বা (ভ্যাকসিন ডিরাইভড পোলিয়ো ভাইরাস) পাওয়া গিয়েছিল। যেখানে ১০০ শতাংশ অর্থাৎ সব শিশুকে টিকা দেওয়ার কথা, সেখানে ২০২১-২২ সালে মহানগরে শিশুদের রুটিন টিকাকরণ হয়েছে মাত্র ৭২ শতাংশ! আলাদা ভাবে পোলিয়ো টিকাকরণের ক্ষেত্রেও রাজ্যের মধ্যে সব থেকে পিছিয়ে কলকাতা।

এই বিবর্ণ চিত্র নিছক এক বছরের নয়। দু’-আড়াই বছর ধরেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শিশুদের রুটিন টিকাকরণের ছন্নছাড়া দশায় স্বাস্থ্যকর্তাদের ঘুম উড়ে যাওয়ার দশা। মাস দেড়েক আগে কলকাতার নর্দমার জলে পোলিয়োর ভাইরাস মেলায় টিকাকরণের এই অবনতি তাঁদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কারণ, রুটিন টিকাকরণে ঘাটতি মানে সার্বিক ভাবে শিশুস্বাস্থ্যের অবনতি। দুর্বল শিশুদের দেহে পোলিয়ো-সহ বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে অতি সহজে।

Advertisement

অভিযোগ, কলকাতা ছাড়াও দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, ঝাড়গ্রাম, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো জেলায় শিশুদের রুটিন টিকাকরণের বেহাল দশা। ওই সব জেলায় টিকার হার মাত্র ৭২-৯৬%। ২০২১-২২ সালে কলকাতায় ওপিভি-১ (ওরাল পোলিয়ো ভ্যাকসিন) ডোজ় পেয়েছে মাত্র ৮০% শিশু। ওপিভি-২ পেয়েছে ৭৫%, ওপিভি-৩ পেয়েছে ৭২% শিশু। মাত্র ৭৯% শিশু আইপিভি-১ (ইঞ্জেক্টেব্‌ল পোলিয়ো ভ্যাকসিন), ৭২% শিশু আইপিভি-২ পেয়েছে।

রাজ্যের পরিবার কল্যাণ আধিকারিক অসীম দাস মালাকার বলেন, ‘‘কলকাতা ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য ছোট শহরে সার্বিক ভাবে রুটিন টিকাকরণ এবং পোলিয়ো টিকাকরণের অবস্থা খারাপ। কলকাতার কয়েকটি এলাকায় টিকার বিরুদ্ধে এখনও মানুষের নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। আমরা তাঁদের বুঝিয়েসুজিয়ে টিকাকরণে গতি আনার সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

সরকারি রিপোর্ট বলছে, মুর্শিদাবাদের ডোমকল, বীরভূমের নলহাটি, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা, রামজীবনপুর, খড়ার, উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলার মতো বহু জায়গা থেকে গত দু’-আড়াই বছরে রুটিন টিকাকরণের কোনও তথ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোডই হয়নি। ফলে সেখানে আদৌ কতটা টিকাকরণ হয়েছে, তার হদিস নেই।

স্বাস্থ্য দফতরের খবর, কলকাতার ক্ষেত্রে ২০২১ সালের জানুয়ারি, জুন, সেপ্টেম্বর এবং ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে যে-পালস পোলিয়ো কর্মসূচি চালানো হয়েছে, তাতে প্রতি বারেই ২, ৮, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ নম্বর বরোর ফল খারাপ। অসংখ্য শিশুকে টিকা দেওয়া যায়নি।

পালস পোলিয়ো কর্মসূচিতে শিশুদের কোনও কারণে টিকা দিতে না-পারলে তাদের বাড়ির বাইরে স্বাস্থ্যকর্মীরা ‘ক্রস’ বা কাটা চিহ্ন দিয়ে আসেন। ২০২১ সালের জানুয়ারির কর্মসূচির পরে কলকাতায় এই ধরনের বাড়ির সংখ্যা ছিল ২৮,৭০১। ওই বছরের জুনে সংখ্যাটা ছিল ২৯,৫৬৭, এবং সেপ্টেম্বরে ২৭,৭৮৬। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পালস পোলিয়ো টিকাকরণের পরে ক্রস চিহ্নিত বাড়ি ছিল ২৭,৭৬৭টি। এবং ওই সব বাড়ির অধিকাংশই ১, ৩, ৭, ৯, ১০, ১২ এবং ১৫ নম্বর বরোয় অবস্থিত।

পালস পোলিয়ো টিকাকরণে যে-সব বাড়ির শিশুদের টিকা দেওয়া হয়, তার বাইরে স্বাস্থ্যকর্মীরা ইংরেজিতে ‘পি’ অক্ষর লিখে দেন। পরে সুপারভাইজারেরা গিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন, সত্যিই সেই সব বাড়ির শিশুরা পোলিয়ো টিকা পেয়েছে কি না। অনেক সময় দেখা যায়, মিথ্যা বলা হয়েছে। অর্থাৎ শিশুকে পোলিয়ো খাওয়ানো হয়নি, অথচ বাড়ির বাইরে ‘পি’ চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের বাড়িকে বলা হয়, ‘ফলস পি হাউস’। কলকাতায় ২০২১-এর সেপ্টেম্বরের টিককরণ কর্মসূচির পরে ৩, ৮, ১০, ১৩ বরো মিলিয়ে এই ধরনের ২৪টি বাড়ির খোঁজ মিলেছিল। ২০২২ এর ফেব্রুয়ারির পোলিয়ো টিকাকরণ কর্মসূচির পরে ২, ৩, ৪, ৫, ৮ মিলিয়ে এই ধরনের বাড়ি পাওয়া যায় ৩৪টি।

সব মিলিয়ে পোলিয়ো এবং অন্য রোগে শিশুদের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement