সোমবার উত্তরপ্রদেশের পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। তাঁদের থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ এবং একটি ছুরিও। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতায় আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ধৃত উত্তরপ্রদেশের দুষ্কৃতীরা প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত। ধৃত পাঁচ দুষ্কৃতীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর লালবাজার থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। পুলিশি জেরায় উঠে এসেছে, ধৃতদের মধ্যে কারও বিটেক (ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক), কারও এমকম (বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর) ডিগ্রি রয়েছে। রয়েছে কলা বিভাগে স্নাতক, বিজ্ঞানে স্নাতক এবং আইটিআই ডিগ্রিধারীও। মঙ্গলবার লালবাজার থেকে এ কথা জানানো হয়েছে।
সোমবার সুরেন্দ্রনাথ উইমেন’স কলেজের সামনে থেকে পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম শিবশঙ্কর যাদব, রাহুল যাদব, আদিত্য মৌর্য, দেবাঙ্ক গুপ্ত এবং রুকেশ সহানি। প্রত্যেকেরই বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। রুকেশই এই দুষ্কৃতীদলের মাথা বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের থেকে একটি আধা স্বয়ংক্রিয় সেভেন এমএম পিস্তল-সহ দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৫ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) রূপেশ কুমার জানান, ধৃতদের থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে একটির গায়ে ‘মেড ইন ইটালি’ লেখা রয়েছে। সাধারণ দেশি আগ্নেয়াস্ত্রের তুলনায় সেটি উন্নত মানের।
ধৃতেরা দু’দিন আগেই কলকাতায় এসেছিলেন। শিয়ালদহে বৈঠকখানা এলাকায় একটি লজ ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন তাঁরা। তবে কী কারণে তাঁরা কলকাতায় এসেছিলেন, কী উদ্দেশ্য ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্থানীয় থানার সঙ্গেও যোগাযোগ করছে লালবাজার। ধৃতদের বিরুদ্ধে আগেও কোনও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে কলকাতা বা রাজ্যের কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, সেটি খতিয়ে দেখছেন পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকেরা। ধৃতদের মধ্যে এক জনের থেকে ট্রেনের টিকিট পাওয়া গিয়েছে। সেটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানান যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপরাধ)।
সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতায় বেশ কিছু ঘটনায় ভিন্রাজ্যের দুষ্কৃতীযোগ পাওয়া গিয়েছে। তবে বাইরে থেকে আসা অপরাধীদের ডেরা হয়ে উঠছে রাজ্য, এই ব্যাখ্যা মানতে চাইছেন না কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মা। তিনি জানান, প্রতিটি রাজ্যেই ভিন্রাজ্য থেকে প্রচুর মানুষ যান। তাঁদের মধ্যে কে দুষ্কৃতী, তাঁকে কী ভাবে চিহ্নিত করা হয়, সেগুলি পুলিশকে খতিয়ে দেখতে হয়। এ ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের কী উদ্দেশ্য ছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার। তাঁর বক্তব্য, গোপন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা এক দিনের কাজ নয়। পুলিশের কাছে কিছু তথ্য ছিল, তার ভিত্তিতে নজর রাখা হচ্ছিল। দুষ্কৃতীরা শহরে পৌঁছতেই তাদের পাকড়াও করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার জানান, সম্প্রতি এক মামলার তদন্তে বিহারেও গিয়েছিল পুলিশ। স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্তও হয়েছে। ভিন্রাজ্যের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেও কলকাতা পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় বলে জানান তিনি। কমিশনার জানান, কসবার তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের উপর হামলার চেষ্টায় ইতিমধ্যে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুই-এক জন বাদে সকলকেই পাকড়াও করা হয়েছে।