রেলের কমিটির নামে প্রতারণা, চার্জশিটে নেই মুকুলের নাম

হাঁসখালির তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের হত্যা মামলাতেও এখনও পর্যন্ত রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি যে দু’টি চার্জশিট জমা দিয়েছে তার একটিতে মুকুলের কথা উল্লেখ থাকলেও শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত করা হয়নি তাঁকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ২০:৫২
Share:

বিজেপি নেতা মুকুল রায়। ফাইল চিত্র।

এফআইআরে নাম ছিল। তবে, শেষ পর্যন্ত রেলে চাকরি এবং রেলের আঞ্চলিক কমিটিতে সদস্য করে দেওয়ার প্রতারণা মামলার চার্জশিটে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের নাম উল্লেখ করল না কলকাতা পুলিশ। সরশুনা থানার ওই মামলায় শুক্রবার আলিপুর আদালতে চার্জশিট জমা পড়েছে। এফআইআরে অভিযুক্ত অন্যদের নাম চার্জশিটে থাকলেও বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের নাম সেখানে নেই। হাঁসখালির তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের হত্যা মামলাতেও এখনও পর্যন্ত রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি যে দু’টি চার্জশিট জমা দিয়েছে তার একটিতে মুকুলের কথা উল্লেখ থাকলেও শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত করা হয়নি তাঁকে।

Advertisement

২০১৯-এর অগস্টে পেশায় ব্যবসায়ী সরশুনার বাসিন্দা সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় অভিযোগ জানান, ২০১৫-য় তাঁর সঙ্গে কয়েক জন ব্যক্তির আলাপ হয়। তাঁরা তাঁকে পূর্ব রেলের জোনাল রেলওয়ে ইউজার্স কনসালটেটিভ কমিটিতে সদস্য করার প্রস্তাব দেন। সদস্য করার জন্য তাঁর কাছ থেকে ৪৬ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এ ছাড়াও, রেলের চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে চাকরি করিয়ে দেওয়ার জন্য জাল নিয়োগপত্র দিয়ে তাঁর কাছ থেকে আরও ১৫ লাখ টাকা নেয় প্রতারকরা। সরশুনা থানায় সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের করা প্রতারণা মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় নাম ছিল বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের।

তদন্তে নেমে সরশুনা থানা দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি নেতা বাবান ঘোষ, রাহুল সাউ, সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করে। সরশুনা থানার আধিকারিকদের হাত থেকে মামলার তদন্তভার তুলে দেওয়া কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের হাতে। শুক্রবার সেই বিশেষ তদন্তকারী দল আলিপুরে অতিরিক্ত বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে ওই মামলার চার্জশিট পেশ করেছে। চার্জশিটে নাম রয়েছে ধৃত বাবান, রাহুল এবং সাদ্দাম হোসেন-সহ চার জনের। চতুর্থ অভিযুক্ত পুরুলিয়ার বাসিন্দা কামাল আনসারির নাম চার্জশিটে থাকলেও সে এখনও পলাতক এই মামলায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: পুজোয় ২০০ স্পেশাল ট্রেন, প্রস্তুতি শুরু রেলের

চার্জশিটে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ধৃতদের আর্থিক লেনদেনের পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। অভিযোগকারীর কাছ থেকে পাওয়া রেলের নিয়োগপত্রগুলি যে জাল, বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তদের কাছ থেকে উদ্ধার নথি যাচাইয়ের জন্য রেল বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে, যার জবাব এখনও পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ চার্জশিটে। তবে তদন্তকারীদের দাবি, এখনও পর্যন্ত যে নথি এবং তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে তার ভিত্তিতে চার জনকে ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রতারণা, জালিয়াতি এবং ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে ধৃতদের মোবাইলের ফরেন্সিক রিপোর্ট এখনও আসেনি। সেই রিপোর্ট পাওয়া গেলে তার ভিত্তিতে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।

মুকুল রায় সম্পর্কে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে— এফআইআরে অভিযুক্ত মুকুল রায়কে এই মামলায় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪১ ধারায় তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছেন তদন্তকারীরা। এর বেশি মুকুলবাবু সম্পর্কে উল্লেখ নেই এই চার্জশিটে। কলকাতা পুলিশের এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘এটা প্রথম চার্জশিট। পরবর্তী তদন্তে আরও কারও ভূমিকা পাওয়া গেলে অতিরিক্ত চার্জশিটে নাম উল্লেখ করা হবে।”

আরও পড়ুন: দুধের এটিএম, ২৪ ঘণ্টাই চালু ‘কাম ধেনু’​

এর আগে হাঁসখালির বিধায়ক হত্যা মামলাতেও প্রথম চার্জশিটে মুকুল রায় এবং রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের নাম উল্লেখ করে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। তারা জানিয়েছিল যে, ওই দু’জনের ভূমিকা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। ওই চার্জশিটে জগন্নাথ সরকার এবং মুকুল রায়কে অভিযুক্ত করা হয়নি। ওই মামলায় কয়েক সপ্তাহ আগে সিআইডি দ্বিতীয় চার্জশিট জমা দিয়েছে। সেখানে জগন্নাথ সরকারকে অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে মুকুল রায় সম্পর্কে কোনও উল্লেখ নেই ওই চার্জশিটে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement