গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
ইডি, সিবিআইয়ের মতো এ বার তল্লাশি অভিযানে নামল কলকাতা পুলিশও। গার্ডেনরিচকাণ্ডের তদন্তে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধৃতদের বাড়িতে পৌঁছল কলকাতা পুলিশের বিশেষ দল। সূত্রের খবর, গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে পড়ার নেপথ্যে যে আইন ভাঙার তত্ত্ব বার বার উঠে আসছে, তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তারই তল পেতে চাইছে কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা। প্রামাণ্য নথিপত্র খুঁজে পেতেই ধৃতদের বাড়িতে শুরু হয়েছে ওই তল্লাশি অভিযান।
গার্ডেনরিচের ঘটনায় গত চার দিনে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন ভেঙে পড়া বহুতলের প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম। অন্য জন ওই বহুতল যে জমিতে তৈরি হয়েছে, সেই জমির মালিক। নাম মহম্মদ সরফরাজ়।
পুলিশের জেরায় ওয়াসিম জানিয়েছিলেন, এই সরফরাজ়ের চাপে পড়েই তাঁকে নীচের তলার কাজ অসম্পূর্ণ রেখে উপরের তলার ফ্ল্যাটের কাজ শুরু করতে হয়েছিল। যার ফলেই পাঁচতলা বাড়িটির ভারসম্য নষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা অনুযায়ী, ভেঙে পড়ার আগে বাড়িটি এক দিকে হেলেও পড়ে। বৃহস্পতিবার সেই সরফরাজ় এবং ওয়াসিমের বাড়িতেই তল্লাশি অভিযান শুরু করে কলকাতা পুলিশ।
পুলিশ জানতে চায়, গার্ডেনরিচের ওই ঠিকানা জে-৫০৬/সি আজহার মোল্লা বাগানে পাঁচতলা ফ্ল্যাট বানানোর অনুমতি কে দিল বা আদৌ ওই ফ্ল্যাট বানানোর জন্য কেউ অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না! সাধারণত এই ধরনের ফ্ল্যাট বানানোর জন্য আরও বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরের অনুমতির প্রয়োজন হয়। পুলিশ খুঁজে দেখছে সেই সমস্ত প্রশাসনিক দফতরের নথি এই ওয়াসিম বা সরফরাজ়ের কাছে আদৌ রয়েছে কি না।
গার্ডেনরিচে ওই ফ্ল্যাট তৈরির প্রয়োজনীয় নথি ছিল কি না তা জানতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর। এ ব্যাপারে তল্লাশি অভিযানের মাধ্যমে নথি পাওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ। তার সঙ্গে যাঁরা ওই বহুতলে ফ্ল্যাট সংরক্ষণ করেছিলেন, তেমন ৮-১০ জনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রবিবার গভীর রাতে একটি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে গার্ডেনরিচের আজহার মোল্লা বাগানে। পাঁচতলা বাড়িটির ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মারা যান ১০ জন। সেই ঘটনার পর নির্মাণটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। শহরের মেয়র ফিরহাদ হাকিমও বলেন, বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি করা এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে ওই বাড়ির প্রোমোটার এবং জমির মালিকের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান শুরু করল পুলিশ।