ফাইল চিত্র।
এ বার পশ্চিমবঙ্গও!
নতুন দু’হাজারের নোটে লক্ষাধিক টাকা সমেত কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল সাত জন। ধৃতদের অন্যতম মণীশ শর্মা (জোশী) এ বার বিধানসভা ভোটে রানিগঞ্জ থেকে বিজেপি-র টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গেই কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) জালে পড়েছে ছয় কয়লা মাফিয়া। কালো টাকা রুখতে তিনি জেহাদে নেমেছেন, এমনই দাবি করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে বেশ কিছু রাজ্যে তাঁরই দলের একাধিক নেতা নতুন বা পুরনো নোটের বান্ডিল সমেত ধরা পড়ার ঘটনা মোদীর অস্বস্তি বাড়িয়েছে। মণীশের ধরা পড়ার ঘটনাতেও বিজেপি-কে বিঁধতে কসুর করেনি তৃণমূল। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, মনীশকে তাঁরা আগেই দল থেকে বহিষ্কার করেছেন।
এসটিএফের দাবি, ধৃত সাত জন কলকাতায় অস্ত্র কিনতে এসেছিলেন। মণীশ ছাড়া বাকি ছয় ধৃতের নাম, রাজেশ ঝা ওরফে রাজু, লোকেশ সিংহ, সায়ন মজুমদার, কৃষ্ণমুরারী কয়াল ওরফে বিল্লু, শুভম ভৌমিক এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওরফে গৌতম। এরা সকলেই বর্ধমানের কয়লাঞ্চলের মাফিয়া হিসাবে পরিচিত। মণীশ রানিগঞ্জের বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা। বাকিরা দুর্গাপুরের। গোয়েন্দারা জানান, রাজু চলতি জুনে জাল নোট পাচার এবং জুলাইয়ে একটি খুনের মামলায় ধরা পড়ে। পরে জামিন পেয়ে যায়। লোকেশের ট্রাকের ব্যবসা রয়েছে। দুর্গাপুরের লাইদোহায় একটি খুনের সঙ্গে সে ও পার্থ জড়িত বলে পুলিশের দাবি। ওই মামলায় পার্থর খোঁজ চলছিল।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ইদানীং রাজু ও মণীশের মাখামাখি বেড়েছিল। সে খবর ছিল শাসকদলের নিচুতলায়। ফলে, পুলিশের কানেও তা উঠতে দেরি হয়নি। রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ কর্তার দাবি, রাজু নিজেও বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছিল। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রাজু-মণীশকে ধরে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়েছে।
লালবাজার সূত্রে দাবি, সোমবার রাতে উল্টোডাঙার বিধান শিশু উদ্যানের সামনে একটি গাড়ি থেকে মণীশ, রাজু-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মঙ্গলবার ভোর ৪টে নাগাদ শুভম ও পার্থকে বাগুইআটির একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করে তারা। পুলিশ সূত্রের খবর, তাদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৭টি আগ্নেয়াস্ত্র, কয়েক রাউন্ড গুলি এবং ৩৩ লক্ষ নতুন টাকার নোট। এর মধ্যে ২৫ লক্ষ রয়েছে দু’হাজার টাকার নতুন নোটে। বাকিটা ১০০ ও ৫০ টাকার নোটে। পুলিশ জানিয়েছে, মনীশের কাছ থেকে ২০০০ টাকার ৫টি বান্ডিল (১০ লক্ষ টাকা) বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে তিনটির লাইসেন্স পাওয়া গিয়েছে, যেগুলি বর্ধমান ও অসমের ডিমাপুরের। কিন্তু সেই সব নথি আসল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
আরও পড়ুন: নোট বাতিলের ধাক্কায় রাজ্যেই ৫ হাজার কোটি ক্ষতির আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রী
মণীশের ধরা পড়ায় ঘটনায় রাজনীতির রঙও লেগেছে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, ‘‘গোটা চক্রের সঙ্গেই বিজেপির উচ্চ নেতৃত্ব জড়িত। পুলিশ তদন্ত করলে বোমা ফেটে যাবে।’’ যা শুনে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কীসের ও কোন ব্যথায় তৃণমূলের এমন হাস্যকর অভিযোগ, তা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন।’’ আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য মণীশের সঙ্গে পরিচয় থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দু’দিন আগেও মণীশ আমার সঙ্গে দেখা করতে এসএমএস করেছিল। আমি এড়িয়ে যাই। ওর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির খবর আসছিল। ওকে পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছিল।’’ এখন বিজেপি-র সঙ্গে মণীশের কোনও যোগাযোগ নেই বলেও বাবুলের দাবি।