ব্রিগেডের মাঠ থেকেই ছবির সংলাপ মুখে বিজেপি সমর্থকদের চাঙ্গা করতে নামেন মিঠুন। —ফাইল চিত্র।
মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ কতটা যুক্তিযুক্তি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ। বিজেপি-র হয়ে ভোটের প্রচারে নিজের সুপারহিট ছবির সংলাপ আওড়ে, গেরুয়া সমর্থকদের চাঙ্গা করতে নামেন মিঠুন। তা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে আদালতে। অভিযোগ, ভোটের প্রচারে প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেছেন মিঠুন। হিংসায় উস্কানি জুগিয়েছেন তিনি। যদিও মিঠুনের আইনজীবীর যুক্তি, সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র নিয়েই ছবি মুক্তি পায়। এই ধরনের সংলাপ যদি উস্কানিমূলক হয়, সে ক্ষেত্রে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র মিলল কী ভাবে?
হিংসায় মদত জোগানোর অভিযোগে সম্প্রতি মানিকতলা থানায় মিঠুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, উস্কানিমূলক মন্তব্য, শান্তিভঙ্গের চেষ্টা, বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং ভিন্ ধর্মের মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানো-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয় সেইসময়। এফআইআর খারিজের জন্য এর পর আদালতের দ্বারস্থ হন মিঠুন।কিন্তু তাঁকে তদন্তে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয় আদালত। এর পর ভার্চুয়াল মাধ্যমে মিঠুনকে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ।
কিন্তু শুক্রবার হাই কোর্টে শুনানি চলাকালীন, এই মামলা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ বিচারপতি। শুনানি চলাকালীন, মিঠুনের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে, জানতে চান তিনি। সরকারি আইনজীবী শ্বাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় তাঁকে জানান, নির্বাচনী প্রচারে নিজের অভিনীত ছবি থেকে বেশ কিছু সংলাপ আওড়াতে শোনা গিয়েছে মিঠুনকে, যা অশান্তি তৈরিতে মদত জুগিয়েছে। মিঠুন কী কী সংলাপ বলেছেন, তাঁর কাছে জানতে চান বিচারপতি। কিন্তু সেই সংলাপগুলি আদালতে তুলে ধরলে, হেসে ফেলেন তিনি। বলেন, ‘‘ সিনেমার সংলাপ কী ভাবে হিংসার কারণ হতে পারে? প্রচারে শুধু এই সংলাপ বলার জন্যই হিংসা হয়ে গেল?’’
মিঠুনের আইনজীবী যুক্তি দেন, ‘‘এ সব তো সিনেমার সংলাপ, যা সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েই মুক্তি পায়। এই ধরনের সংলাপ খারাপ হলে, সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিল কী ভাবে? নির্বাচন কমিশনই বা নীরব রইল কেন?’’
জবাবে সরকারি আইনজীবী জানান, এখনও বিশদ তথ্য হাতে আসেনি। তার জন্য ফের নোটিস পাঠানো হয়েছে মিঠুনকে। আরও কিছু প্রশ্ন করা হবে তাঁকে। সোমবারের মধ্যে তাঁকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাই সোমবারের পর মামলার শুনানি করতে আদালতে আর্জি জানান সরকারি আইনজীবী। তাঁতে সাড়া দিয়েই আগামী ২ জুলাই, বুধবার মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
এর আগে, বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে মিঠুনের বিরুদ্ধে শুনানি চলছিল। কিন্তু হাই কোর্ট প্রশাসনের নির্দেশে পরে সেটি বিচারপতি চন্দের কাছে যায়। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে ওই মামলা সরানোর আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন মামলাকারী মৃত্যুঞ্জয় পালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী। সরাসরি তার কারণ না জানালেও, নিরপেক্ষ বিচারের আশাতেই মামলা স্থানান্তর করার আর্জি জানানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সম্প্রতি নন্দীগ্রামের নির্বাচনী ফল নিয়ে দায়ের হওয়া মামলাও বিচারপতি চন্দের কাছ থেকে সরানোর আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিজেপি-র ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ তৃণমূলের।