উপসর্গ ডেঙ্গির, তাতেই মৃত্যু কি না বলতে তবু দ্বিধা

কলকাতা পুরসভার ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের রিজেন্ট কলোনির পারমিতা ও রাজেশ সাহার মেয়ে প্রজ্ঞাকে জ্বর, হেমারেজ (রক্তক্ষরণ) নিয়ে বৃহস্পতিবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩০
Share:

জ্বরে মৃত অর্পিতা পাসোয়ান।

তার দাপট এ বার চলছিল মূলত অশোকনগর, দেগঙ্গা-সহ উত্তর ২৪ পরগনায়। পুজো এগিয়ে আসার মুখে অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল কামারহাটি এবং কলকাতাতেও। রবিবার ভোরে ওই জ্বরে অর্পিতা পাসোয়ান (৩৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বেলঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। আর শনিবার রাতে একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় প্রজ্ঞা সাহা (৮) নামে একটি শিশু। দু’জনের ক্ষেত্রেই উপসর্গ ডেঙ্গির। তবু ডেঙ্গি বলতে ইতস্তত করছে পুরসভা।

Advertisement

কলকাতা পুরসভার ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের রিজেন্ট কলোনির পারমিতা ও রাজেশ সাহার মেয়ে প্রজ্ঞাকে জ্বর, হেমারেজ (রক্তক্ষরণ) নিয়ে বৃহস্পতিবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাকে আইসিইউ ও ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়েছিল। ভর্তি হন পারমিতাদেবীও। শনিবার গভীর রাতে মারা যায় প্রজ্ঞা। কামারহাটি পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রেল কলোনির বাসিন্দা অর্পিতার পরিবার জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন ওই বধূ। বমি করছিলেন। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখালেও জ্বর-বমি কমেনি। শনিবার তাঁকে বেলঘরিয়ার এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের খবর, অ্যালাইজ়া পদ্ধতিতে অর্পিতার রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গির জীবাণু মেলে। অর্পিতা-প্রজ্ঞার ডেথ সার্টিফিকেটে হেমারেজিক শক এবং বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকেরা।

কলকাতা ও শহরতলির অনেক জায়গা থেকেই ডেঙ্গির খবর আসছে। রিজেন্ট কলোনিতে প্রজ্ঞার বাড়ির লাগোয়া দু’টি বস্তিতে কয়েক জনের ডেঙ্গি হয়েছে বলে জানান বাসিন্দারা। রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই কলোনি সংলগ্ন সুকান্তপল্লিরও বেশ কয়েক জন প্রবল জ্বর, বমি নিয়ে বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসার পরে বাড়িতে এসেছেন। সঞ্চিতা সাহা নামে একটি বালিকা হাজরার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গির চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সেই তালিকায় রয়েছেন বছর পঞ্চাশের কুমকুম বিশ্বাস, বছর নয়ের সঞ্চয়ন মান্না ও বুলটি দাস। ৯৭ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ওয়ার্ডে যাতে জল বা নোংরা না-জমে, সে-দিকে সতর্ক নজর রাখা হয়। তবু বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গি ও জ্বর ছড়াচ্ছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, পুর এলাকায় ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা ৬০২। পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে-হাসপাতালে প্রজ্ঞা ভর্তি ছিল, সেখান থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে স্বাস্থ্য ভবনে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ডেঙ্গিতে মৃত্যু কি না, তা নিশ্চিত করবে স্বাস্থ্য ভবনই।’’ কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) বিমল সাহার অভিযোগ, দক্ষিণেশ্বর রেল কলোনির অবস্থা খুবই খারাপ। জঙ্গল, নিকাশি নালা, পুকুর সাফ করার দায়িত্ব রেলের। কিন্তু রেল কিছুই করে না। বেশ কয়েক জনের অজানা জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে রেল কলোনিতে অভিযান চালিয়ে এডিস মশার লার্ভা মিলেছে। পুরসভা এলাকা সাফাই করে খরচের বিল রেলের কাছে পাঠাবে বলে জানান তিনি। দক্ষিণেশ্বর রেল কলোনিতে অন্তত ১৪ জন অজানা জ্বরে আক্রান্ত।

Advertisement

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্ট পর্যালোচনার পরেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। বেসরকারি হাসপাতালে কী ধরনের চিকিৎসা হয়েছে, তা-ও দেখা হবে। এমনিতে কলকাতায় এ বছর ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা খুব কম। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁ ছাড়া সারা রাজ্যেই ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, এ-পর্যন্ত ডেঙ্গিতে ১৯ জনের মৃত্যুর কথা জানা গিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১১ হাজার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement