বর্ধমানের বাবুরবাগে এই বাড়িতেই ভাড়া থাকত খাগড়াগড়-কাণ্ডের ‘মূল চক্রী’ কওসর। ছবি: উদিত সিংহ
খাগড়াগড়-কাণ্ডের ‘মূল চক্রী’ কওসর-সহ ওই মামলায় ধৃত ৩১ জনের মধ্যে ৩০ জনের সাজা হয়েছে বুধবার। তবে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছিল, তা এখনও তালা বন্ধ। বাবুরবাগে কওসর যে ঘরে ভাড়া থাকত, সেটিও ব্যবহারের অনুমতি এখনও পাননি বাড়ির লোকজন। কবে তা মিলবে, অপেক্ষায় রয়েছেন দুই পরিবারই।
খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হয়েছিল যে বাড়িতে তার উল্টো দিকেই একটি বাড়িতে সপরিবার থাকেন বাড়ির মালিক নুরুল হাসান চৌধুরী। তিনি জানান, কাঠাখানেক জায়গায় চার লক্ষ টাকা খরচে ২০০৮ সালে দোতলা বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। দোতলায় বসবাসের জন্য ও এক তলায় দোকানঘরের জন্য ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। নীচে একটি ঘরে হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক ছেলে আসরফ চৌধুরী চেম্বার করেন। খাতায়কলমে তিনিই বাড়ির মালিক।
কিন্তু ২০১৪-র ২ অক্টোবরের বিস্ফোরণ সব পরিকল্পনা ওলটপালট করে দেয়। বিস্ফোরণে দু’জন মারা যান। ঘটনার সূত্রে রাজ্যের নানা প্রান্তে জেহাদি-নেটওয়ার্কের হদিস পায় এনআইএ। বাড়ি ‘সিল’ করে পুলিশ। তখন থেকে বাড়িটি বন্ধ। ৭৯ বছরের বৃদ্ধের দাবি, ‘‘সংসারে টানাটানি। আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই অসুস্থ। প্রচুর টাকার ওষুধ লাগে। বাড়িটা ফেরত পেয়ে ভাড়া দিতে পারলে, সুরাহা হত। এনআইএ-কে চিঠিও দিয়েছি।’’
এনআইএ সূত্রে জানা যায়, বাবুরবাগের যে বাড়িতে কওসরেরা ভাড়া থাকত, ঘটনার পরেই তারা বিভিন্ন নথি পুড়িয়ে সেখান থেকে চলে যায়। এনআইএ-র তদন্তকারীরা ঘরে ঢুকে দেখেন, কওসরদের ব্যবহৃত সাংসারিক জিনিসপত্র, আসবাব রয়েছে। ঘরটি ব্যবহার করা বা ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে এনআইএ-র তরফে নিষেধ করা হয় জানিয়ে বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা ওমর হোসেনের দাবি, ‘‘ভাড়ার টাকাতেই দিন চলত। এখন টালির চাল দিয়ে জল পড়ে। অথচ, ফাঁকা ঘর ভাড়া দেওয়া যাচ্ছে না। এনআইএ বা পুলিশের নির্দেশ তো ভাঙতে পারি না।’’ দু’টি পরিবারেরই দাবি, বিচার-পর্ব অনেকটাই সম্পূর্ণ। তাই এ বার বাড়ি তাঁদের হাতে ফেরানোর ব্যবস্থা হোক।
এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ বলেন, ‘‘বাড়ি এখন আমাদের হাতে নেই। রাজ্য প্রশাসনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্তাদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফেও নির্দেশ আসেনি। তা এলে, পদক্ষেপ করা হবে।