গ্রাফিক
বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটলেও তার লাটাই ধরা আছে বহুকাল আগে থেকে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র, ‘সকেট’ বোমা তৈরির আঁতুড়ঘর মুর্শিদাবাদের হাতে! খাগড়াগড়-কাণ্ডের দোষীদের তালিকা ও ঘটনার পরম্পরা তেমনটাই বলছে, আস্ত মুর্শিদাবাদ জেলাটাই যেন খাগড়াগড়!
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের সুতোয় জড়িয়ে গিয়েছে প্রায় সারা মুর্শিদাবাদ জেলা। ঘটনার জাল কত দূর বিস্তৃত তা জানতে জাতীয় তদন্তকারী দল এনআইএকে জাল ফেলতে হয়েছিল বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া লালগোলার মকিমনগরের খারিজি মাদ্রাসা থেকে শুরু করে বেলডাঙার ‘বোরখা ঘর’, ডোমকলের ঘোড়ামারার খারিজি মাদ্রাসা, বহরমপুর ও নবগ্রামের হতদরিদ্র দু’টি গ্রাম— যথাক্রমে উপরডিহা ও তেলগড়িয়ায়।
এনআইএ-এর রেডারে ধরা পড়েছে রঘুনাথগঞ্জের খোদারামপুরের মহম্মদ রেজাউল করিম ওরফে আনোয়ার। ধরা পড়েছে শমসেরগঞ্জের নামো-চাঁচণ্ডের আব্দুল ওয়াহাব মোমিন। ২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ধরা পড়ে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর চাঁই সাজিদ। তার আরও দু’টি নাম আছে— বুরহান ও শেখ রহমতুল্লা। একাধিক নামের আড়ালে অনেক দিন ধরে লুকিয়ে থাকা সাজিদের এ দেশের ঠিকানা কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলা। বাংলাদেশের সীমানা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরের লালগোলার মকিমনগরের মোফাজ্জুল আলির খারিজি মাদ্রাসা সাজিদের ঠিকানা।
খাগড়াগড় কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত আলিমা বিবির তেলগড়িয়ার গ্রামের প্রতিবেশী গ্রাম উপরডিহার হবিবুর রহমান ছিলেন মকিমনগরের মাদ্রাসার রাঁধুনি। এনআইএ সূত্রের খবর, মকিমনগরের ধৃত মোফাজ্জুলের সূত্র ধরে খাগড়াগড়ের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকার বেআইনি সম্পর্কের হদিশ মিলেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের খাতায় ‘সকেট’ বোমা তৈরিতে কয়েক দশক ধরে কুখ্যাত বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়ের অনতিদূরে রয়েছে কাপাসডাঙা ও মির্জাপুরের মতো বৃহৎ দু’টি গ্রাম। বেলডাঙার এক প্রসিদ্ধ বস্ত্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘গোলাবারুদের ওই ঐতিহ্যের কারণে শাকিল আহমেদ ও হাতকাটা নাসিরুল্লার পক্ষে জনবহুল ও ব্যস্ততম বড়ুয়া মোড়ের ‘বোরখাঘর’-এ ডেরা বাঁধা বোধহয় সম্ভব হয়েছিল।’’
খাগড়াগড় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল শাকিল আহমেদের। পলাতক হাতকাটা নাসিরুল্লা। পালাতে পারেনি খাগড়াগড় বিস্ফোরণে জড়িত দুই মহিলা। তাদের মধ্যে রয়েছে নবগ্রামের তালগড়িয়ার মেয়ে আলিমা বিবি। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮ জনই মুর্শিদাবাদ জেলার। মুর্শিদাবাদ জেলা গোয়েন্দা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নে দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি স্পর্শকাতর জেলা হিসাবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের খাতায় নথিবদ্ধ রয়েছে।’’
ঘটনাচক্রে খাগড়াগড় বর্ধমানে। কিন্তু মাকড়সার জালের মতো তা যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে মুর্শিদাবাদকে, রায় ঘোষণার পরে তা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গেল।