পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন সমর্থকেরা। ইলাহাবাদে। ছবি: পিটিআই
উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন স্পিকার কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল করে পাঠাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
গত শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে পরবর্তী রাজ্যপাল হিসেবে দিল্লির বিজেপি নেতা বিজয়কুমার মলহোত্রের কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তখনই কেন্দ্রের দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে ত্রিপাঠীর নাম জানিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় পছন্দই যে রাজভবনের বাসিন্দা হতে চলেছেন, তার মূল কারণ, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হতে মলহোত্রের আপত্তি।
মলহোত্রের ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, রাজ্যপাল করার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কথা হলেও তাঁকে যে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হবে, সেটা জানানো হয়নি। মলহোত্র পঞ্জাবে যেতে আগ্রহী। তাঁর হাঁপানির সমস্যা রয়েছে। তাই আর্দ্র কলকাতার চেয়ে শুকনো পঞ্জাবই তাঁর বেশি পছন্দ। তা ছাড়া, তুলনামূলক ভাবে দিল্লির কাছে হওয়ায় সেখান থেকে আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সুবিধা হবে। মলহোত্র নিজে মুখে অবশ্য আজ বলেছেন, রাজ্যপাল হওয়ার কোনও বাসনা তাঁর নেই। তিনি যেমন আছেন, ভালই আছেন।
এই অবস্থায় ত্রিপাঠীকেই বেছে নিয়েছে কেন্দ্র। আগামী বছরের পুরভোট এবং ২০১৬-র বিধানসভার নির্বাচনকে পাখির চোখ করে পশ্চিমবঙ্গে ঘর গোছাতে চাওয়া সঙ্ঘ পরিবারের কাছেও ত্রিপাঠী তুলনায় বেশি পছন্দের লোক। আর নয়া সভাপতি অমিত শাহের নেতৃত্বে আক্রমণাত্মক রণকৌশল নিতে চাওয়া রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বও ত্রিপাঠীর নাম ঘোষণায় খুশি।
ত্রিপাঠী নিজে অবশ্য এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসাই করেছেন। তিনি বলেছেন, “মমতা অত্যন্ত বিচক্ষণ রাজনীতিক ও দক্ষ প্রশাসক। শুধু কোনও খারাপ কাজ দেখলেই তিনি রেগে যান। যদিও এই আচরণকে হাতিয়ার করে অনেকেই তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেন।” ট্রাই সংশোধনী বিল নিয়ে সংসদে তৃণমূল মোদী সরকারের পাশে দাঁড়ানোর দিনই ভাবী রাজ্যপালের এ হেন মন্তব্যকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার বলছেন, এটা নিছকই শিষ্টাচার। রাজ্যের মাটিতে পা রাখার আগেই সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত করে ফেলার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
ত্রিপাঠীর নিয়োগের কথা জেনে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “উনি রাজ্যে স্বাগত। আমার কোনও অসুবিধা নেই।”
রাজ্যপাল নিয়োগের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলা হলেও তাঁর সম্মতি নেওয়ার কোনও শর্ত সংবিধানে নেই। রাজ্যপাল হিসেবে কাকে পাঠানো হবে, সেটা একান্ত ভাবেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। সাধারণ সৌজন্যবশত মুখ্যমন্ত্রীকে আগাম সে কথা জানানো হয় মাত্র। এটা ঠিক যে বিরোধীরা এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আপত্তি জানাচ্ছে। কিন্তু তার সাংবিধানিক কোনও ভিত্তি নেই। জওহরলাল নেহরু কখনও রাজ্যপাল নিয়োগ নিয়ে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতেন না। এমনকী কংগ্রেসি রাজ্যগুলির সঙ্গেও না। নরেন্দ্র মোদী সেই পথেই হাঁটছেন। ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে রাজনাথের সঙ্গে বৈঠকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী।
আর তার পরেই পাঁচ রাজ্যে রাজ্যপালের নাম ঘোষণা করে কেন্দ্র। ত্রিপাঠীর পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল হচ্ছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী রাম নায়েক। মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতে পাঠানো হচ্ছে রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ ওমপ্রকাশ কোহলিকে। ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যপাল হচ্ছেন জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বলরামজি দাস টন্ডন। নাগাল্যান্ডে যাচ্ছেন প্রবীণ বিজেপি নেতা পদ্মনাভ আচার্য। এই পাঁচ জনের নিয়োগপত্রেই আজ সই করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
৮০ বছর বয়সী ত্রিপাঠী ১৯৭৭ থেকে ’৭৯ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে জনতা পার্টির সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। রাজ্য বিধানসভায় তিন তিন বার স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেছেন। হিন্দি ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই লিখেছেন একাধিক বই।