দলের পদ ছা়ড়ার চিঠি, রবি কি তৃণমূলের পথেই

কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দল ছাড়ার জল্পনা আরও জোরালো হল। কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের সহকারী নেতা এবং প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি পাঠালেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবকে ফ্যাক্স মারফত বুধবার চিঠি পাঠিয়ে পদ ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিয়েছেন রবিবাবু। বিধানসভায় গত সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৫ ০৩:৩৬
Share:

কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দল ছাড়ার জল্পনা আরও জোরালো হল। কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের সহকারী নেতা এবং প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি পাঠালেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবকে ফ্যাক্স মারফত বুধবার চিঠি পাঠিয়ে পদ ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিয়েছেন রবিবাবু। বিধানসভায় গত সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। তার পর থেকে আর বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দেননি। বরং, কাটোয়ায় স্থানীয় স্তরে সভা করে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মতামত সংগ্রহ করছিলেন। তার পরেই তাঁর এই পদ ছা়ড়ার সিদ্ধান্তে মনে করা হচ্ছে, তৃণমূলে রবির উদয় এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা! দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর কলকাতা সফরের আগেই রবিবাবুর মতো বর্ষীয়ান বিধায়ক দল ছেড়ে দিলে সেই ঘটনা কংগ্রেসের পক্ষে নিঃসন্দেহে বিড়ম্বনার কারণ হবে!

Advertisement

রবিবাবুর চিঠি পেয়ে অবশ্য তাঁকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা সোহরাব। তাঁর আর্জি শুনে রবিবাবু আজ, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় এসে পরিষদীয় দলনেতার সঙ্গে দেখা করবেন বলে সোহরাব জানিয়েছেন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘রবিবাবুকে বলেছি, কোনও ভাবেই তাঁকে দলের দায়িত্ব থেকে ছাড়া যাবে না। উনি এসে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।’’ প্রদেশ সভাপতি অধীরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তিনি কী করতে চান, তিনিই জানেন! তাঁর মনের কথা তো আমার জানা নেই! তবে কংগ্রেসে ঢোকা সহজ, বেরোনো আরও সহজ। টিকে থাকা সব চেয়ে কঠিন!’’ প্রদেশ সভাপতির ব্যাখ্যা, ৩৪ বছরের বাম জমানায় সন্ত্রাস মোকাবিলা করেই লড়তে হয়েছিল কংগ্রেসকে। তার পরের চার বছরে সন্ত্রাসের পাশাপাশি প্রলোভনের সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে! এ সব মোকাবিলা করে কংগ্রেসে টিকে থাকাই সমস্যা!

পদ ছাড়তে চেয়ে চিঠি পাঠানোর পরে খোদ রবিবাবু অবশ্য এ দিন জানিয়েছেন, আজ তিনি কলকাতায় আসবেন। তাঁর কথায়, ‘‘সোহরাবদা ফোন করেছিলেন। বিধানসভায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলব। বিভিন্ন বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে।’’ কলকাতায় এসে সোহরাবের পাশাপাশি রবিবাবু তৃণমূল নেতৃত্বের কারও সঙ্গে ফের দেখা করবেন কি না, সেই প্রশ্নেও জল্পনা চলছে। তবে কংগ্রেসের অন্দরেই একাংশের প্রশ্ন, কাটোয়ায় রবিবাবুর মতো দলের দীর্ঘ দিনের সৈনিক অভিমানে অন্য পথে পা বাড়িয়েছেন দেখেও প্রদেশ সভাপতি কেন আরও তৎপর হলেন না? কেন রবিবাবুর কাছে গিয়ে তাঁর মুখোমুখি বসলেন না? যদিও কংগ্রেসেরই অন্য শিবিরের যুক্তি, ফোনে অধীর কাটোয়ার বিধায়কের সঙ্গে এর মধ্যে কথা বলেছেন। কেউ দল ছাড়ার ব্যাপারে মনস্থ করে ফেললে কী আর করা যাবে!

Advertisement

পুরভোটে এ বার কাটোয়ায় তুমুল সংঘর্ষ বেধেছিল কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে। ভোটের দিন এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সরাসরি খুনের মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে বিধায়ক রবিবাবুকে। খুনের মামলায় পুলিশ তাঁকে এবং কাটোয়ার কংগ্রেস কর্মীদের অহেতুক হেনস্থা করছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন রবিবাবু। তখনই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন, শাসক দলে যোগ দেওয়ার কথা ভেবে দেখতে। তার আগে থেকেই অবশ্য প্রদেশ সভাপতি অধীরের সঙ্গে রবিবাবুর মনোমালিন্য চলছিল। কাটোয়ায় এ বার তৃণমূল ও কংগ্রেস ১০টি করে আসন পেলেও তাঁরা বিরোধী আসনে বসবেন বলে প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিলেন রবিবাবু। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কয়েক দিন পরেই তিন জন কংগ্রেস কাউন্সিলরের সমর্থনে কাটোয়ায় পুরবোর্ড গঠন করে তৃণমূল। এই গোটা ঘটনাপ্রবাহের জেরে কংগ্রেস শিবিরে চর্চা চলছিল, খুনের মামলায় জেরবার রবিবাবুকে ‘রেহাই’ দেওয়ার বিনিময়ে তাঁকে দলে টেনে নেবেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্র, মানস ভুঁইয়ারা অবশ্য রবিবাবুকে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু সে সবের পরেও বিধায়কের দলীয় পদ ছাড়ার চিঠি তাঁর দলত্যাগকে আরও আসন্ন করে তুলল বলেই তৃণমূল সূত্রের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement