দুর্ঘটনার কবলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। ছবি: পিটিআই।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার ফলে বন্দে ভারতের সময় পরিবর্তন করল রেল। সোমবার রাতে রেল জানিয়েছে, দুর্ঘটনার ফলে ডাউন লাইনে সব ট্রেন দেরিতে চলছে। সেই কারণে, মঙ্গলবার সকাল ৫টা ৫৫ মিনিটের হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক ঘণ্টা দেরিতে অর্থাৎ ৬টা ৫৫ মিনিটে হাওড়া স্টেশন থেকে ছাড়বে।
মালদহে যাত্রীদের হাতে খাবার এবং জলের বোতল তুলে দিল রেল।
রেলের তরফে চতুর্থ বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে রাঙাপানি এবং চটেরহাটের মাঝে মালগাড়ি এবং কাঞ্জনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়েছে। আগরতলা থেকে আসছিল ট্রেনটি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলেই পৌঁছয় উদ্ধারকারী দল। এই দুর্ঘটনার কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনের দিকে চারটি কামরা এবং মালগাড়ির পাঁচটি কামরা লাইচ্যুত হয়েছে। এর ফলে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে আপ লাইনে ট্রেন চলাচল চালু করা হয়েছে। এর ফলে বেশ কিছু ট্রেনের গতিপথ ঘোরানো হয়েছে। কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
জলপাইগুড়ির কাছে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছলেন বিজেপি সাংসদ সুকান্ত। কথা বললেন উদ্ধারকারীদের সঙ্গে। এই দুর্ঘটনাকে ‘মানুষের ভুল’ বলেই জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কী প্রকারের হিউমান এরর, সেটা তদন্ত করে বার করতে হবে।’’
দুর্ঘটনা নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করেনি রেল। রেলকর্মীদের একাংশের মতে, দুর্ঘটনার কবলে পড়া মালগাড়ির চালক সিগন্যাল মানেননি! সেই কারণেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের লাইনে চলে এসেছিল মালগাড়িটি।
হাসপাতালে পৌঁছলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেখানে গিয়ে দেখা করেন রোগীদের সঙ্গে। এর পর বলেন, ‘‘এটা দোষারোপের সময় নয়। পদক্ষেপ করার সময়।’’
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে আপ লাইনে (জলপাইগুড়িগামী) ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ডাউন লাইনেও ট্রেন চলাচল শীঘ্রই চালু করা হচ্ছে।
সোমবার সকালে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। জলপাইগুড়ির কাছে দীর্ঘ ক্ষণ আটকে ছিল সেটি। বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। দুপুর দেড়টা নাগাদ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের অক্ষত অংশ যাত্রীদের নিয়ে মালদহের দিকে রওনা দেয়। এমনটাই জানান পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র। তিনি জানিয়েছেন, যাত্রীদের জল এবং খাবার দেওয়া হয়েছে। কিষাণগড় স্টেশনে যাত্রীদের হাতে খাবার তুলে দেওয়া হয়েছে।
যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে খাবার। — নিজস্ব চিত্র।
রাত ১২টার সময় শিয়ালদহ স্টেশনে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি হেল্প ডেস্ক চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সেই হেল্প ডেস্কের দায়িত্বে থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী। রাজ্য পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে ছোট, মাঝারি এবং বড় সরকারি বাসের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে শিয়ালদহ স্টেশনে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস শিয়ালদহে পৌঁছলে, যাতে সকল যাত্রী নিজেদের বাড়িতে পৌঁছতে পারেন, সেই জন্যই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। এর পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে এক জনের জখম গুরুতর। চিকিৎসকদের প্রশংসা করেছেন তিনি। আরও জানিয়েছেন, জুনিয়র ডাক্তাররা ভাল কাজ করেছেন। রক্তদান করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন শুধুই বন্দে ভারতের নামে পাবলিসিটি (প্রচার)। দুরন্ত এক্সপ্রেস ছিল সব চেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন। ওটা আমি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন শুধুই অবহেলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’’ পাশাপাশিই মমতা বলেছেন, ‘‘আমি রেলকর্মীদের পাশে রয়েছি।’’
জলপাইগুড়ির কাছে দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে রওনা হয়েছেন তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। কলকাতা বিমানবন্দরে বিমান ধরার আগে তিনি বলেন, ‘‘এখন শুধু ফ্যাশন হচ্ছে, ঘোষণার নামে কথার ফুলঝুরি হচ্ছে। অথচ কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এখনও ওড়িশায় অনেক মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। যেগুলিকে চিহ্নিত করা যায়নি।’’ এই প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা রাজনীতির সময় নয়। আগে আমাদের উদ্ধারকাজে নজর দিতে হবে।’’
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থলে সোমবার বিকেলে পৌঁছেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি জানান, আপাতত উদ্ধারকাজ চলছে। কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন রেলমন্ত্রী।
সোমবার সকালে এই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হল নয়। তাঁদের মধ্যে দু’জন রেল কর্মী। গুরুতর জখম হয়েছেন ন’জন। সামান্য চোটআঘাত লেগেছে ৩২ জনের। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মালগাড়ির চালক মারা গিয়েছেন। সহ-চালক জীবিত রয়েছেন। তবে গুরুতর জখম হয়েছেন তিনি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ডও মারা গিয়েছেন। আগে রেলের তরফে জানানো হয়েছিল, সহকারী চালক মারা গিয়েছেন।
রেলের প্রাথমিক অনুমান, লাল সিগন্যাল দেখতে পাননি মালগাড়ির চালক। সেই কারণেই একই লাইনে এসে যায় সেটি। সাধারণত যে লাইনে এক্সপ্রেস ট্রেন চলে, সেই লাইনে মালগাড়ি চালানো হয় না। মালগাড়িকে দাঁড় করিয়ে পাস করানো হয় এক্সপ্রেস। এ ক্ষেত্রে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনেই ছিল মালগাড়িটি। একই লাইনেই দু’টি ট্রেন পাস করানোর পরিকল্পনা ছিল রেলের। তবে আগে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে শিয়ালদহের উদ্দেশে রওনা করিয়ে দিয়ে তার পর মালগাড়িকে পাস করানোর কথা। সেই কারণেই মালগাড়িকে লাল সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। রেলের অনুমান, মালগাড়ির চালক ওই সিগন্যাল দেখতে পাননি। ফলে একই লাইনে এসে পড়ে মালগাড়িটি। ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে।
আগরতলা থেকে শিয়ালদহের দিকে আসছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। সিগন্যাল লাল থাকায় নীচবাড়ি এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে দাঁড়িয়েছিল ট্রেনটি। তখন সেই লাইনেই এসে পড়ে একটি মালগাড়ি। সজোরে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মারে সেটি। খেলনাগাড়ির মতো মালগাড়ির উপর উঠে পড়ে এক্সপ্রেসের পিছনের একাধিক বগি। লাইচ্যুত হয় মালগাড়িও।