West Bengal Recruitment Case

নিয়োগ মামলায় জামিন পেলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময়

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিল কলকাতা হাই কোর্ট। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কল্যাণকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:১৪
Share:

কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিল কলকাতা হাই কোর্ট। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কল্যাণকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।

Advertisement

বুধবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করতে হবে কল্যাণময়কে। কলকাতার বাইরে তিনি যেতে পারবেন না। কল্যাণময় প্রবেশ করতে পারবেন না বিধাননগর কমিশনারেট এবং পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকায়। আদালত জানিয়েছে, পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতিকে পাসপোর্ট নিম্ন আদালতে জমা রাখতে হবে। বুধবার সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানায়, প্রায় ১৪ মাস জেলে বন্দি থাকার পরেও সিবিআই এখনও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। কেন এক জন অভিযুক্তকে এত দিন বন্দি রাখা হবে, তারও সদুত্তর দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থাটি।

হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, কল্যাণময় একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তাঁর যথেষ্ট সামাজিক পরিচিতি রয়েছে। আগেও তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। ফলে জামিন পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। তা ছাড়া কল্যাণময় সরকারি পদ ব্যবহার করে দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু বর্তমানে তিনি ওই পদে নেই।

Advertisement

আদালত জানিয়েছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত চলছে। সিবিআই অনেক তথ্য, নথি বাজেয়াপ্ত করেছে। এমতাবস্থায় তথ্য বিকৃত করার সুযোগ কল্যাণময়ের নেই। এখনও পর্যন্ত কল্যাণময়ের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির কোনও নথি বা আয় বহির্ভূত সম্পত্তির হিসাব দেখাতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা।

বিচারপতি বাগচীর পর্যবেক্ষণ, আমরা আশাবাদী যে সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখা যাবে । কিন্তু, দু'টি চার্জশিটে বিপুল সংখ্যক সাক্ষীদের উল্লেখ আছে। এই সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ কবে শেষ হবে, আর কবে নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে তা স্পষ্ট নয়। অদূর ভবিষ্যতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভব ক্ষীণ। তবুও আদালত জানাচ্ছে, সরকারি চাকরি পাওয়ার আশা সব নাগরিকের থাকে। উচ্চপদে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতিমূলক আচরণের কারণে সে আশা ধাক্কা খায়। অভিযোগ ভয়াবহ। যে দুর্নীতির অভিযোগ করা হচ্ছে সমাজে তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর টানা জেরার পরে গ্রেফতার করা হয় কল্যাণময়কে। ২০১০ সাল থেকে টানা প্রায় ১০ বছর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি থাকাকালীন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে কল্যাণময়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ। এর আগে বিশেষ সিবিআই আদালত এবং হাই কোর্টে কল্যাণময়ের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

এর আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপাকে জামিন দিয়েছিল হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে জামিন পান নিয়োগ দুর্নীতির 'মিডলম্যান' প্রসন্নকুমার রায়। এ বার দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার কল্যাণময়কে জামিন দিল হাই কোর্ট। সিবিআই জামিনের বিরোধিতা করলেও আদালত তা গ্রাহ্য করেনি। উল্টে সিবিআই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে হাই কোর্ট। জামিন দেওয়া হয় কল্যাণময়কে।

স্কুলে গ্ৰুপ-সি এবং গ্ৰুপ-ডি কর্মী নিয়োগ মামলায় কল্যাণময়ের নামে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার ষড়যন্ত্রে তাঁর নাম উঠে আসে। হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত বাগ কমিটিও নিয়োগ দুর্নীতিতে পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি জড়িত বলে জানায়। তাদের রিপোর্ট জানায়, এসএসসির উপদেষ্টা কমিটির প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিংহ অযোগ্যদের সুপারিশপত্র কল্যাণময়ের কাছে পাঠাতেন। তার পর তিনি নিয়োগপত্র ছাপতে দিতেন। ওই গত বছর তাঁকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement