কল্যাণী পুরসভার ক্ষেত্রে ওই আবেদনপত্রের ৯ নম্বরে লেখা রয়েছে, ‘নাগরিকত্বের প্রমাণ’। —নিজস্ব চিত্র।
বিতর্কের মুখে এ বার ‘ফর্ম’ বদল করছে কল্যাণী পুরসভা। ওই পুরসভা থেকে এত দিন জন্মের শংসাপত্র পেতে আবেদনপত্র পূরণের সময় ‘নাগরিকত্বের প্রমাণ’ দিতে হত। সোমবার আনন্দবাজার ডিজিটালে সেই খবর প্রকাশ পেতেই বিতর্ক শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়ার ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যখন লাগাতার তোপ দাগছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন সেই তাঁর রাজ্যেই সন্তানের জন্মের শংসাপত্র পেতে অভিভাবকের কাছে নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে? এর পরেই নড়েচড়ে বসেন নদিয়ার ওই পুর কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আবেদনপত্রের ৯ নম্বর কলম থেকে ‘নাগরিকত্বের প্রমাণ’ সরিয়ে দেওয়া হবে। ছাপানো হবে নতুন আবেদনপত্র।
নাগরিকত্ব ইস্যুতে দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হতেই এ রাজ্যে জন্মের শংসাপত্র পেতে ভিড় বাড়তে থাকে পুরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলিতে। সেই শংসাপত্র পাওয়ার জন্য পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলির নিজস্ব আবেদনপত্র রয়েছে। কল্যাণী পুরসভার ক্ষেত্রে ওই আবেদনপত্রের ৯ নম্বরে লেখা রয়েছে, ‘নাগরিকত্বের প্রমাণ’। পুত্র বা কন্যার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, বাবা এবং মায়ের নাম, ঠিকানা, তাঁদের বর্তমান-সহ জীবিত সন্তানের সংখ্যা যেমন জানতে চাওয়া হয়েছে ওই আবেদনপত্রে, তেমনই হাসপাতাল, নার্সিংহোম বা নিজের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করার প্রমাণপত্রের সঙ্গে লাগবে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রও। মঙ্গলবার কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান সুশীলকুমার তালুকদার বলেন, ‘‘আমরা নতুন করে আবেদনপত্র ছাপাচ্ছি। ওই আবেদনপত্রে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রের যে কলামটি ছিল, তা আর রাখা হবে না। পুরনাগরিকদের চিন্তা করার কোনও কারণ নেই।’’
এ দিনই উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা এনআরসি, এনপিআর করব না। আমাকে রোজ রোজ এ কথা বলতে হয়। এটা মাথায় রাখতে হবে। কিছু কিছু পুরসভা কাগজ ছেড়ে দিচ্ছে। আরে, পড়াশোনা করতে হবে তো!’’ উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব কেউ কাড়তে পারবে না বলে জানিয়ে এ দিনই কালিয়াগঞ্জে মমতা বলেন, ‘‘বাংলা থেকে একটা মানুষকেও তাড়াতে দেব না। কেউ বাড়িতে গিয়ে তথ্য দাও বললে দেবেন না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার ভোটারকার্ড আছে। ভোট দিই। সেটাই আমার অধিকার। আমার অধিকার কাউকে কাড়তে দেব না। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, সব জাতি, সব ধর্ম আমরা এই দেশের নাগরিক।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি জনসভায় বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যত দিন আছেন, এ রাজ্যে এনআরসি হবে না।’’
আরও পড়ুন: জন্মের শংসাপত্র পেতেও মমতার রাজ্যে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হচ্ছে!
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসখ্যা পঞ্জি (এনআরপি) নিয়ে এমনিতেই কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে তিনি যখন লাগাতার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছেন, তখন তাঁরই সরকার এ রাজ্যে ঘুরপথে নাগরিকত্বের প্রমাণ চাইছে বলে অভিযোগ ওঠে। সন্তানের জন্মের শংসাপত্র পেতে ‘নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র’ চাওয়ায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রের সঙ্গে এনআরসি বা এনপিআর-এর কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা।
আরও পড়ুন: ৩ হাজার টাকার জন্য মালিকের শিশুপুত্রকে গলা কেটে খুন! ১২ ঘণ্টার মধ্যে ধৃত কর্মচারী
সোমবার কল্যাণীর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ‘‘কল্যাণী পুর এলাকার বাসিন্দা হলে, তাঁর প্রমাণপত্র চাই আমরা। এতে অন্য কোনও গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা না করাই ভাল।’’ আনন্দবাজার ডিজিটালে খবর প্রকাশের পর বিতর্ক শুরুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদিও অন্য কথা বলছেন চেয়ারম্যান সুশীলকুমার তালুকদার। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “ওই আবেদনপত্রটি পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। এ বার নতুন করে ছাপানো হবে। তার জন্যে দু’তিন দিন সময় লাগবে।”