(বাঁ দিকে) তন্ময় ভট্টাচার্য। কলতান দাশগুপ্ত (ডান দিকে)। —গ্রাফিক আনন্দবাজার অনলাইন।
মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার অভিযোগে দলের নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করেছে সিপিএম। পার্টিতে সম্মেলন পর্বের মধ্যে তন্ময়কে সাসপেন্ড করেই তাঁর বিষয়ে দলীয় তদন্ত চলছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া দলেরই অন্দরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা সিপিএমে তন্ময়ের ‘ঘনিষ্ঠেরা’ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, গত সেপ্টেম্বরে হুমকি-অডিয়ো মামলায় দলের যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরে গোটা দল তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু তন্ময়ের বিরুদ্ধে হাতেগরম কোনও ‘প্রমাণ’ (ভিড্য়ো বা ওই ধরনের কিছু) নেই। তা হলে তাঁর ক্ষেত্রে শাস্তি এই পদক্ষেপ কেন?
ঘটনাচক্রে, সিপিএমে যখন এই নতুন ‘কলতান’ শুরু হয়েছে, তখনই ওই যুবনেতার অডিয়ো-মামলা নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। এবং তা নাটকীয়!
কলতানের সঙ্গে হালতুর সঞ্জীব দাসের কথোপকথন প্রকাশ্যে এনেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। ১৪ সেপ্টেম্বর বিকালে কুণাল তা ফাঁস করেন। সেই রাতেই সঞ্জীবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে দিন কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণের দাবিতে সিপিএমের ‘লালবাজার অভিযান’ ছিল। সারা রাত লালবাজারের অদূরে অবস্থান করেছিলেন বামকর্মীরা। পর দিন ভোরে বৌবাজারের অদূরে ফিয়ার্স লেন থেকে কলতান যখন ফিরছিলেন, তখন তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যে অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছিল, তাতে কলতান এবং সঞ্জীবের কথোপকথনে দু’জনের নাম শোনা গিয়েছিল। এক জনকে সম্বোধন করা হচ্ছিল ‘বাপ্পাদা’ বলে, অন্য জনকে ‘দাদু’। তখন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান চলছিল। কথোপকথনের অডিয়ো ক্লিপ ফাঁস করে কুণাল দাবি করেছিলেন, সঞ্জীব এবং কলতানের কথোপকথনে ডাক্তারদের অবস্থানে হামলার ছক করা হয়েছিল।
ঘটনাচক্রে, সিপিএম স্বয়ং রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সঞ্জয় ঘোষ নামের এক ব্যক্তির ডাকনাম ‘বাপ্পা’। সেই বাপ্পাকেই দু’দিন আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল সল্টলেকের ইলেক্ট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার পুলিশ। ওই থানাই কলতানের ঘটনাটির তদন্ত করেছিল। গ্রেফতারের পর কলতানকে ওই থানাতেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদের পর বাপ্পার ফোনটি বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে ওই থানার পুলিশ। মামলাটির তদন্তকারী অফিসার শ্যামল বণিক আপাতত ছুটিতে আছেন। বিধাননগর পুলিশ সূত্রে খবর, স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে তিনি চেন্নাই নিয়ে গিয়েছেন। থানার আইসি তাপস কুমার দাসকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ফোনে এ নিয়ে আমি কোনও কথা বলব না।’’
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সেলিম অবশ্য সরাসরি পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসা’র অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কলতানকে জামিন দিয়ে হাই কোর্ট বলেছিল বেশি এগোতে না। তার পরেও পুলিশ এই কাজ করেছে। আসলে ওরা অপরাধীদের আড়াল করে প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চাইছে।’’ সেলিমের আরও সংযোজন, ‘‘কলকাতা পুলিশকে দেখে বিধাননগর পুলিশ শিক্ষা নিক!’’ সূত্রের খবর, বাপ্পার বিরুদ্ধে পুলিশ যে পদক্ষেপ করেছে, তা নিয়ে পাল্টা মামলার প্রস্তুতি শুরু করেছে সিপিএম।
কলতানকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। নিম্ন আদালত তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছিল। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যায় সিপিএম। উচ্চ আদালত কলতানের গ্রেফতারি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছিল। তার পর থেকেই তিনি জামিনে রয়েছেন। এর মধ্যে কন্যাসন্তানের পিতাও হয়েছেন।
তবে উত্তর ২৪ পরগনা সিপিএমে তন্ময়কাণ্ডের রেশ ধরেই আলোচিত হচ্ছে কলতানের প্রসঙ্গ। যদিও সিপিএম নেতারা বলছেন, কলতানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিল তৃণমূলের দিক থেকে। আর তন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন এক জন মহিলা সাংবাদিক। দু’টি এক বিষয় নয়। সিপিএমের সম্মেলন পর্বে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। টালিগঞ্জ-২ এরিয়া কমিটির সম্মেলনে প্রকাশ্যেই বচসা এবং মারপিট হয়েছে। ঘটনাচক্রে, ওই এলাকা থেকেই গত সপ্তাহে এক তরুণ নেতাকে নারীনিগ্রহের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে সিপিএম।