— প্রতীকী চিত্র।
পূরণ তো নয়ই, নিয়োগ দুর্নীতিতে শহরে ভোটের ক্ষত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেসে।
নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর শাসক দলের অন্দরে এই আশঙ্কা মাথা তুলতে শুরু করেছে। শুধু তা-ই নয়, এই পরিস্থিতিতে দলের ‘ব্যাখ্যা’র গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও সংশয় রয়েছে শাসক নেতৃত্বের একাংশের। একাধিক জেলা থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে যে মৌখিক রিপোর্ট পৌঁছেছে, তা-ও দলের জন্য উদ্বেগজনক। তবে পরিস্থিতি বদলাতে সোমবার চাকরিহারা শিক্ষকদের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বার্তা’র দিকে তাকিয়ে আছে দলের এই অংশ।
রাজ্যের শহরাঞ্চলের প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার প্রমাণ লোকসভা ভোটের সময়েই হাতে পেয়েছে তৃণমূল। সেই ক্ষত সারানোর চেষ্টার মধ্যেই পর পর দু’টি বড় ধাক্কা এসেছে গত বছর আর জি কর হাসপাতালের ঘটনা এবং নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে। দলের একাংশ মনে করে, আর জি কর-কাণ্ডের পরে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের ভূমিকা ‘নেতিবাচক’। ব্যতিক্রমী ওই সামাজিক বিপদের সময়ে সামগ্রিক ভাবে শাসক সম্পর্কে ‘অসংবেদনশীলতা’র বার্তা গিয়েছে জনমানসে। দলের এক নেতা মেনে নিয়েছেন, ‘‘আর জি কর মোকাবিলায় প্রশাসনের ভূমিকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। নিয়োগ বাতিলেও তা হয়েছে।’’ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এক বছর সময় থাকলেও তাঁর মতে, ‘‘দলের জন্য এই রায় নিঃসন্দেহে ধাক্কা। সরকারকে নিশ্চয়ই রাস্তা ভাবতে হবে।’’
তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের পরে সরকার-বিরোধী যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, সেই রকম আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পরেও। সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, গত লোকসভার ভোটযুদ্ধের মধ্যে একই রায় দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তার পরে লোকসভা ভোটে তৃণমূলের আসন বাড়লেও সামগ্রিক ভাবে শহরাঞ্চলে ভোট কমেছে অনেক। এর পরে বিধানসভা ভোট হবে সরাসরি রাজ্য সরকার তৈরির প্রশ্নেই। তাই শাসক শিবিরে উদ্বেগের স্রোত আছে।
লোকসভা ভোটে কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রায় ৭৫% পুরসভায় পিছিয়ে পড়ার পিছনে পরিষেবার পাশাপাশি শহুরে কর্মসংস্থানের ঘাটতির বিষয়টিও টের পেয়েছিল তৃণমূল। সেই ক্ষত মেরামতি শুরুর আগেই আর জি কর-কাণ্ড সামনে এসে পড়ে। তার পরে শিক্ষিত বেকারদের চাকরি বাতিলে যে পরিস্থিতি তৈরি হল, তার প্রেক্ষিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ছন্নছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে তৃণমূলে। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শুক্রবার তৃণমূল রাজ্যব্যাপী যে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছিল, তাতে প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। রাজ্য নেতৃত্বের কাছে একাধিক জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছেন, চাকরি বাতিলের ঘটনার জেরে এই অবস্থা তৈরি হতে পারে।
দলের একাংশের মতে, সাধারণ সরকারি পরিষেবার ঘাটতি গত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। ‘দুয়ারে সরকার’-এর মতো প্রকল্প নেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে তাতে ‘দৃশ্যমান উন্নতি’কে সামগ্রিক চেহারা দেওয়া যায়নি। কিছু ভাতা বা আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হলেও কর্মসংস্থান নিয়ে তৃণমূল সরকার সাধারণ পথ দেখাতে পারেনি। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তো নয়ই। বরং, ক্ষমতায় আসার পরে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষিত বেকারদের জন্য শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ নষ্ট হয়েছে এই দুর্নীতির কারণে। দলের সাংগঠনিক কাজের ভারপ্রাপ্ত এক নেতার কথায়, ‘‘শহরাঞ্চলের দলের ক্ষত মেরামত আরও কঠিন হবে।’’ পাশাপাশি সেই বৃত্ত বড় হওয়া আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি তিনি।