কালনায় চলছে আস্ত বাড়ি সরানোর কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম অজানা থাকায় ‘ভুল জায়গায়’ বাড়ি করে ফেলেছিলেন। যার জেরে বাড়ির মন্দিরের অবস্থান হয়েছিল অগ্নিকোণে অর্থাৎ দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের মধ্যস্থানে। তাতেই নাকি পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের কালনার এক বাসিন্দার। সেই ‘বাস্তুদোষ’ কাটাতে এ বার কার্যত অসম্ভবকেই সম্ভব করতে উদ্যোগী হলেন তিনি। গোটা বাড়িটিই উপড়ে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রায় ৭৫ ফুট দূরে।
হিন্দুশাস্ত্রে ঈশানকোণে অর্থাৎ উত্তর ও পূর্ব দিকের মধ্যস্থানে মন্দির গড়ার কথা বলা হয়েছে। তবে কালনার পূর্ব সাতগেছিয়া পঞ্চায়েতের শাশপুরের বাসিন্দা উদয় বিশ্বাসের বাড়ির মন্দির রয়েছে অগ্নিকোণে। উদয়ের দাবি, বছর দশেক আগে বাড়ি তৈরির পর থেকেই তাঁর পরিবারিক অশান্তি শুরু হয়েছে। এর থেকে নিস্তার পেতে স্থানীয় এক বাস্তু বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন তিনি। সেই বিশেষজ্ঞের দাবি, ‘‘আপনার বাড়ির মন্দিরটি ঈশানকোণে না থাকায় পারিবারিক সমস্যা হচ্ছে।’’ সে কথা শুনে উদয় স্থির করেন, আবার বাড়ি করবেন। তবে ১০ বছর আগে হাজার বর্গফুটের যে বাড়ি করতে ২৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, তা এখন করতে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে। তবে উপায়? সুরাহা পেতে পুরনো বাড়িটিকেই ঘোরাতে উদ্যোগী হয়েছেন উদয়। ইউটিউবে তিনি দেখেছিলেন, বিদেশে এ ভাবে বাড়ি বা বড়সড় গাছ উপড়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। এ রাজ্যে তেমনটা আকছার না হলেও বিরল নয়। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মুক্তিপ্রকাশ সরকার বলেন, ‘‘পূর্ব বর্ধমান এবং হুগলিতে এমনকি বর্ধমান শহরেও এ ধরনের কাজ দেখা গিয়েছে। সেখানে বাড়ি উঁচু করা হয়েছে। যদিও বাড়ি সরানোর কাজটা খুবই জটিল এবং সমস্যার। সামান্য এদিক-ওদিক হলেই বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে। এটি খুবই আধুনিক প্রযুক্তি। সব কিছু নির্ভর করছে ইঞ্জিনিয়ারদের উপর।’’
যদিও বাড়ি সরানোর ঝুঁকি নিতে রাজি ছিলেন উদয়। এর পর হরিয়ানার একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। কলকাতার ইএম বাইপাসের ধারে ওই সংস্থাটির শাখা রয়েছে। সেখানকার কর্মীরা উদয়ের বাড়ি দেখে যান। এর পর ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তির পর দিন পনেরো আগে শুরু হয় বাড়ি সরানোর কাজ।
উদয় জানিয়েছেন, ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি মতো ৪৫০ টাকা প্রতি বর্গফুট হিসাবে কাজ হচ্ছে। ফলে হাজার বর্গফুটের ওই বাড়িটি সরাতে সাড়ে চার লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। তবে নতুন করে বাড়ি তৈরি না করেই তা অন্যত্র ‘গড়ে উঠছে’। গোটা প্রক্রিয়ায় কাজে লেগেছেন ভিন্ রাজ্যের ১৫ জন শ্রমিক।
উদয়ের এ হেন উদ্যোগ চাক্ষুষ করতে ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘ইউটিউবে এত দিন যা দেখেছি, সেটাই চোখের সামনে দেখে আশ্চর্য লাগছে।’’ বাড়িটি যথাস্থানে সরানোর কাজ শুরু হওয়ায় নিশ্চিন্ত উদয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম বাড়িটা হয়তো ভাঙতে হবে। কিন্তু এখন আমি অনেকটাই নিশ্চিন্ত!’’