বুধবার বিচার ভবনে হাজির করানো হয় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে। —ফাইল ছবি।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলার জন্য তাঁকে কোনও চাপ দেওয়া হয়নি। বুধবার এমন দাবিই করলেন নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। তিনি জানিয়েছেন, ‘সাহেব’-এর নাম নেওয়ার জন্য তাঁকে কোনও চাপ দেওয়া হয়নি।
এর আগে নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষ পুলিশ এবং কলকাতা হাই কোর্টে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের নাম বলানোর জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকেরা তাঁর উপর চাপ দিচ্ছেন। এর পর আদালতের অনুমতিতেই সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিষেককে। তবে সুজয় জানিয়েছেন, অভিষেক প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তাঁর নাম বলার জন্য কোনও রকমের চাপ দেওয়া হয়নি।
বুধবার বিচার ভবনে হাজির করানো হয় ধৃত সুজয়কে। তার আগে সকালে জোকা ইএসআই হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। ইডি হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর কাছে কী কী বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, বেরোনোর সময় তা জানতে চাওয়া হয়। জবাবে সুজয় বলেন, ‘‘সবই জানতে চাইল। বললাম। লিখলাম।’’ অভিষেকের বিষয়ে কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে কি? সুজয়ের জবাব, ‘‘হ্যাঁ করেছে।’’ তদন্তকারীরা কোনও রকমের ‘জোর’ করেছেন কি না জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ‘‘না, না, চাপ দেয়নি।’’
এর আগে কুন্তল দাবি করেছিলেন, অভিষেকের নাম নেওয়ার জন্য তাঁর উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন কুন্তল। সেই অভিযোগ হেস্টিংস থানায় পৌঁছে দেওয়া হয়। কুন্তলের এই দাবির আগে শহিদ মিনারের সভা থেকে অভিষেক জানিয়েছিলেন, হেফাজতে থাকার সময় মদন মিত্র, কুণাল ঘোষকে তাঁর নাম নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনাচক্রে, এর পর কুন্তলও একই অভিযোগ করেন। তা নিয়েই কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, প্রয়োজনে অভিষেককে প্রশ্ন করতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই রায় বহাল রাখেন বিচারপতি অমৃতা সিন্হাও।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত এই কুন্তলের সূত্রেই ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা প্রকাশ্যে এসেছিল। নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তাপস মণ্ডলও সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় কুন্তল নাকি আশ্বাস দিয়ে বলতেন, ‘‘কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ ইডি সূত্রে জানা গিয়েছিল, পরে গোপাল দলপতি এবং তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কুন্তলের ওই ‘কালীঘাটের কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার সংস্থার চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ‘আতশ কাচের তলায়’ সুজয়।
গ্রেফতার হওয়ার আগে সুজয় দাবি করেছিলেন, তাঁর ‘সাহেব’ তৃণমূল সাংসদ অভিষেক। ২০০৯ থেকে অভিষেকের অফিসে চাকরি করছেন তিনি। সুজয় তখন বলেছিলেন, ‘‘পৃথিবীর কারও ক্ষমতা নেই আমার সাহেবকে ছোঁবে। কারণ তাঁর নাম কেউ করতে পারবেন না। তাঁর সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারবে না, তাঁর সঙ্গে কেউ ফোনে কথা বলতে পারবেন না। আমার কাছ অবধি এসে থেমে যেতে হচ্ছে।’’ এর পর যদিও সুজয়কে গ্রেফতার করে ইডি।