সিবিআই তদন্তের দাবিতে বাড়ির পাশেই সমাধি দেওয়া হয়েছে নাবালিকার দেহ। শেয়ালের হাত থেকে দেহ বাঁচাতে সমাধিস্থল ঘেরার ব্যবস্থা করল পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।
নাবালিকার মৃতদেহের ময়না-তদন্তের প্রক্রিয়ার সময়ে পুলিশ তাঁদের সেখানে হাজির করেছিল। শুক্রবার তিন চিকিৎসকের বোর্ড মৃতদেহের ময়না-তদন্ত করে। পুরো প্রক্রিয়ার ‘ভিডিয়োগ্রাফি’ করা হয়। কিন্তু ময়না-তদন্তের সময়ে ওই নাবালিকার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুলিশ বা ডাক্তারেরা তাঁদের কিছু বলেননি। ময়না-তদন্তের ২৪ ঘণ্টা পরে, শনিবার পুলিশ মৌখিক ভাবে নাবালিকার বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়। সোমবার তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উত্তর দিনাজপুরের মৃত নাবালিকার পরিজনেরা। ঘটনার তিন দিন পেরোলেও কেন পুলিশ তাঁদের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দিচ্ছে না, তা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে তাঁদের। এই সব প্রশ্ন তুলে সিবিআই তদন্তও চেয়েছে পরিবারটি। পুলিশে পাল্টা দাবি, ময়না-তদন্ত চলার সময়ে মৃত্যুর কারণ তো বলা সম্ভব নয়।
ঘটনাচক্রে, এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে এ দিনই কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাস। সোমবার হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনমের ডিভিশন বেঞ্চে তিনি মামলা দায়েরের অনুমতি চাইলে আদালত সেই অনুমতি দিয়েছে। কোর্টের খবর, সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি নির্যাতিতার পরিবারের নিরাপত্তা এবং ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আর্জিও কোর্টে জানিয়েছেন মামলাকারী। আজ, মঙ্গলবার মামলাটির শুনানি হতে পারে বলে সূত্রের খবর। এ দিনই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, ওই পরিবারটি মেয়েটির শ্রাদ্ধের শেষে কলকাতায় আসবে। তাঁরা পরিবারটিকে সব রকম আইনি সাহায্য দেবেন বলেও জানান শুভেন্দু।
রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতার এ সবেরই জবাবে দাবি করেন, “ময়না-তদন্ত চলার সময় কী করে মৃত্যুর কারণ বলা যাবে? আমরা সময় মতো মৃতার পরিবারকে ময়না-তদন্তে যা পাওয়া গিয়েছে, জানিয়েছি। লিখিত ভাবে আবেদন করলেই ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাবেন ওঁরা।’’ নির্যাতিতার পরিবার যে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, সে ব্যাপারে তিনি জানান, তাঁদের বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট রয়েছে। তাই উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই। বাকি দুই ফেরার-অভিযুক্তের ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলেও তাঁর দাবি।
এ দিন তদন্তকারী পুলিশ-কর্তারা মৃত ওই নাবালিকার বাড়িতে গিয়ে তাঁদের মামলার নথি ও ‘সিজ়ার লিস্ট’-এ সই করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা সই করতে রাজি হননি। মৃতার কাকা বলেন, “আমার ভাইঝি আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। পুলিশের উপরে আমাদের ভরসা নেই। তাই পুলিশকে আমরা সহযোগিতা করিনি।’’
ময়না-তদন্তের সময়ে মৃতার বাবা ও কাকা হাজির ছিলেন। কাকা এ দিন বলেন, “আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ময়না-তদন্ত চলে। পুলিশ ও ডাক্তারেরা ভাইঝির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তখন আমাদের কিছু বলেননি। আমাদেরও তাঁদের কিছু জিজ্ঞাসা করার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না। ২৪ ঘণ্টা পরে, পুলিশ বাড়িতে এসে জানায়, ভাইঝি বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনও ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আমাদের দেয়নি।” পুলিশের দাবি, ওই নাবালিকার মৃতদেহের পাশ থেকে একটি কীটনাশকের কৌটো উদ্ধার হয়েছিল। নাবালিকার কাকার পাল্টা দাবি, ‘‘বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার হলে ভাইঝি বাড়িতেই বিষ খেতে পারত।’’ পুলিশের তদন্তে ভরসা নেই তাঁদের, এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সিবিআই-তদন্ত চাই।”
মৃতার পরিবার ও স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ওই নাবালিকার মৃতদেহ উদ্ধারের পরে, দু’পক্ষকে ঘটনা মিটমাট করে দেওয়ার জন্য ‘চাপ’ দিয়েছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর স্বামী। নির্যাতিতার পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে অবশ্য তাঁদের নাম নেই। যদিও এখন তাঁরা দাবি করছেন, ওই দু’জনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডাকা উচিত। প্রধান ও তাঁর স্বামীর দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে ওই নাবালিকা এবং অভিযুক্ত যুবক নিখোঁজ হয়। দু’পক্ষই পরামর্শ নিতে তাঁদের বাড়িতে যায়। প্রধানের স্বামী বলেন, “সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার কথা দলের ব্লক সভাপতিকে জানাই। এর পরে, দলের নির্দেশে দু’পক্ষকে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিই।”