প্রতীকী চিত্র
কালীপুজো এবং দীপাবলিতে সব রকম বাজি নিষিদ্ধ করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু, সোমবার ‘সবুজ বাজি’ পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এ বঙ্গের উত্তর থেকে দক্ষিণ—অধিকাংশ ছোট বাজি ব্যবসায়ীর অবশ্য এক রা, ‘সবুজ বাজি’ খায় না মাথায় দেয়, তাই তাঁদের জানা নেই।
সম্ভবত এই ধন্দেই মঙ্গলবারও জমেনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুঙ্গি ও চম্পাহাটির বাজিবাজার। ধোঁয়াশা রয়েছে পুলিশের অন্দরেও। সে কথা মনে করিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আমরা চিন্তিত। কারণ, বাজি ফাটুক আর পোড়ানো হোক, হয় শব্দ দূষণ হবে না হয় বায়ু দূষণ হবে। সেটা কখনওই সবুজ বা পরিবেশ বান্ধব হতে পারে না। তা ছাড়া এটা কে দেখবে? পুলিশ তো আর বিশেষজ্ঞ নয়!’’
আড়ালে সে কথা মানছেন একাধিক জেলার পুলিশকর্তারা। সম্ভবত, সে কারণেই বাজারে যাতে কোনও বাজি বিক্রিই না হয়, তা নিশ্চিত করতে চাইছে বীরভূম জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দনাথ ত্রিপাঠীর কথায়, ‘‘কে ‘সবুজ’ বাজি বিক্রি করছে আর কে দূষণ সৃষ্টিকারী, এই নজরদারি করা কার্যত অসম্ভব। ‘সবুজ’ বাজি কী বস্তু তা এখনও জানেন না অনেকেই।’’
এ দিনই সন্ধ্যায় বাজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লালবাজারে বৈঠক করেন কলকাতা পুলিশের বড়কর্তারা। সেখানেও পুলিশের তরফে প্রশ্ন ওঠে, ‘সবুজ বাজি’ চেনার উপায় কী? বাজি ব্যবসায়ীদের দাবি, আলোচনার পরেও ধোঁয়াশা কাটেনি। এর মধ্যেই লালবাজারের তরফে থানাগুলিকে পাঠানো এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সবুজ বাজি কাকে বলে বা এই ধরনের বাজির গুণাগুণ কী। এই ধরনের বাজির বাক্সের গায়ে সিএসআইআর-ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি)-এর হলোগ্রাম বা লোগো থাকবে। যার ছবিও নির্দেশিকাপত্রে দেওয়া হয়েছে।
এরই পাশাপাশি পুলিশ নিষিদ্ধ শব্দবাজি ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রেতা সেজেও পুলিশকর্মীরা দোকানে হাজির হচ্ছেন। উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুরে প্রচুর নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ধরাও পড়েছেন একাধিক বাজি কারবারি। যদিও পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, ‘বিক্ষিপ্ত ধরপাকড়ে কোনও কাজ হবে না। সবুজ বাজি’র তকমা সেঁটে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হতে শুরু করলে, পুলিশ-প্রশাসন তা আটকাতে পারবে কি?
এটা ঠিক যে, আড়ালে আবডালে রাজ্যের বহু জায়গায় সাধারণ বাজি বিক্রি হচ্ছে। মালদহ, দুই মেদিনীপুরে যেমন সব রকম বাজিই মিলছে। কেনাবেচা চলছে কখনও আড়ালে, কখনও প্রকাশ্যে। হাওড়া গ্রামীণ জেলার বিভিন্ন এলাকাতেও এ দিন দেদার বাজি বিকিয়েছে। জানতে চাইলে বিক্রেতাদের পাল্টা প্রশ্ন—‘কোথায় পাব আপনারাই বলে দিন এই পরিবেশবান্ধব ‘সবুজ বাজি’!’
আজ, বুধবারই বাজি নিয়ে ফের হাই কোর্টে শুনানি রয়েছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, আজ যদি হাই কোর্ট সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নিয়ে ‘সবুজ বাজি’তে ছাড় দেয়, তা হলে সেই বাজি বিক্রি হবে কোথায়? তড়িঘড়ি কি বাজি বাজার বসানো সম্ভব? রাত পর্যন্ত অবশ্য এ নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি।