প্রণব মণ্ডলের পরিবার। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।
বয়সের ভারে আর উঠে দাঁড়াতে পারেন না। নিরুবালা মণ্ডল এখন বাড়ির সামনে ছেলের পথ চেয়ে বসে থাকেন সকাল থেকে। বাড়ির দেওয়াল ধরে কাঁপা পায়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসেন, তার পরে হাত জোড় করে বললেন, ‘‘আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনো বাবা। বড় খিদে বাবা, ও না ফিরলে খাব কী!’’
নিছক কথার কথা নয়, বাংলাদেশ পুলিশের হাতে আটক প্রণব মণ্ডলের রুজির উপরেই বেঁচে আছেন বৃদ্ধ মা, চার সন্তান আর স্ত্রী। পদ্মা থেকে মাছ ধরে, আড়তে বিক্রি করেই কেনা হয় চাল-ডাল থেকে মায়ের ওষুধ। বৃহস্পতিবার বিজিবি-র হাতে প্রণব আটক হওয়ার পরে তার আস্ত পরিবারটার সামনে ঝুলে গিয়েছে প্রশ্ন চিহ্ন। এ দিন হাঁড়িতে চাল চাপেনি সে বাড়িতে, বাড়ি আর বিএসএফ ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী রেখা। তিনি বলছেন, ‘‘মাস দু’য়েক আগে কাঠা দুয়েক জমি লিজ দিয়ে ১৫ হাজার টাকা দামের একটা জাল আর ৩০ হাজার টাকায় নৌকা কিনেছিল স্বামী। ভেবেছিল, এই সময়ে জালে ইলিশ উঠলেই টাকা জমিয়ে জমিটা ফিরিয়ে নেবে। কিন্তু জমি দূরের কথা, এখন আমাদের মুখের খাবারটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।’’
প্রণবের পরিবার-সহ গোটা শিরচর তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। তাদের আশা, এখনও হয়তো বিজিবি ফ্ল্যাগ মিটিং করে ফিরিয়ে দেবে প্রণবকে। কিন্তু এ দিন চারঘাট থানায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার খবর নদী উজিয়ে ফিরে আসতেই ভেঙে পড়েছে পরিবারটি।
প্রণব একা নন, যাঁরা বাংলাদেশের বিজিবির হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ফিরে এসেছেন সেই তাপস এবং অচিন্ত্য মণ্ডলের পরিবারের কপালেও এ দিন চিন্তার ভাঁজ। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বিএসএফ তাদের হেফাজত থেকে ছাড়েনি দুই মৎস্যজীবীকে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হতাশাও বাড়ছে তাঁদেরও।
শিরচর গ্রামের ১৭০টি মৎস্যজীবী পরিবারের সামনেই এখন ঘোর অনিশ্চয়তা। নদীর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে তাঁরা এখন রুজির অপেক্ষায়।