কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
সরকারের পক্ষে ‘অস্বস্তিকর’ কোনও প্রশ্ন বা প্রসঙ্গ লোকসভায় তুলতে সাংসদদের নিষেধ করে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে মঙ্গলবার কলকাতার মহারাষ্ট্র নিবাসে প্রথম পর্যালোচনা বৈঠকে বসে বিজেপি। সেখানে দলের রাজ্য পদাধিকারী, ৪২ জন প্রার্থী ও লোকসভার পর্যবেক্ষক এবং জেলাগুলির সভাপতি ও পর্যবেক্ষকদের ডাকা হয়েছিল। দলীয় সূত্রের খবর, সেখানে প্রার্থীদের সঙ্গে আলাদা ভাবে আলোচনায় বসে তাঁদের আচরণবিধি বুঝিয়ে দেন কৈলাস। সেই সূত্রেই তিনি তাঁদের বলেন, লোকসভায় এমন কোনও প্রশ্ন বা প্রসঙ্গ তুলবেন না, যাতে কেন্দ্রীয় সরকার অস্বস্তিতে পড়ে।
তৃণমূল একে ‘গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ’ বলে মনে করছে। দলের নেতা তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘একেই বলে কণ্ঠরোধের গণতন্ত্র। বিধানসভা, পুরসভা— সর্বত্রই আমরা জনপ্রতিনিধিদের বলি স্থানীয় মানুষের বক্তব্য আমাদের জানাতে। আর ওঁরা সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পান। এই তো ওঁদের গণতন্ত্র!’’
এ দিনের বৈঠকে সাংসদদের প্রতি কৈলাসের আরও পরামর্শ— সৎ ও পরিশ্রমী হতে হবে, জনসংযোগে ঢিলে দেওয়া চলবে না। ভাষণে কৈলাস বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিরা মিথ্যে কথা বললে মানুষ ঠিক বুঝতে পারেন। আবার ভাল করে কাজ করলেও মানুষ বুঝবেন। আপনাকে কেউ ফোন করলে আপনি হয়তো বললেন, দিল্লিতে আছেন। আসলে হয়তো অন্য কোথাও আছেন। মানুষ কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তিতে টাওয়ার লোকেট করে জেনে যাবে প্রকৃত সত্য।’’ কৈলাস মনে করিয়ে দেন, ‘‘অহঙ্কার যেন আপনাদের পেয়ে না বসে। মানুষের সঙ্গে বিনম্র ব্যবহার করবেন।’’
মহারাষ্ট্র নিবাসের বাইরে বৈঠকে যোগ দিতে আসা বিজেপি নেতাদের গাড়ির সারি। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
লোকসভার পরাজিত প্রার্থীদেরও চাঙ্গা করার বার্তা দেন কৈলাস। তাঁর পরামর্শ— পরাজিতদের নিজেদের কেন্দ্রে গিয়ে পড়ে থেকে মানুষের সেবা করতে হবে, মানুষের দাবিতে আন্দোলনে সামিল হতে হবে। স্মৃতি ইরানির উদাহরণ দিয়ে কৈলাস বৈঠকে বলেন, স্মৃতি গত বার অমেঠিতে হেরে গিয়েও পাঁচ বছর সেখানে পরিশ্রম করে এ বার জিতেছেন। পরাজিত প্রার্থীদের তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের নতুন সাংসদ দিলীপ ঘোষ এ দিন বৈঠকে ২৩ আসন জয়ের লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের অভিজ্ঞতার একটু অভাব ছিল। তাই লক্ষ্য পুরো হল না। তবে লোকসভা ভোটে ভাল ফলই সব নয়। আমাদের আসল লক্ষ্য বাংলা।’’ ২৩টি আসন না পাওয়ায় সংগঠনের খামতিগুলির তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেন কৈলাসও। দিলীপবাবু এত দিন খড়্গপুর (সদর)-এর বিধায়ক ছিলেন। মেদিনীপুরের সাংসদ হয়ে যাওয়ায় এ দিন তিনি বিধানসভায় গিয়ে বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন।’’