ঝালদার সভায়। নিজস্ব চিত্র
পুলিশ মারফৎ পুরুলিয়া জেলা থেকে তৃণমূলের শীর্ষস্তরে টাকা পৌঁছচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন বিজেপি নেতৃত্ব। শুক্রবার দুপুরে ঝালদার মেরি আপকার গ্রাউন্ড থেকে মিছিল করে হাটতলায় এসে বিজেপি সভা করে। সেখানে বিজেপির রাজ্য পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় অভিযোগ করেন, এখান থেকে পুলিশের মাধ্যমে তৃণমূলের শীর্ষস্তরে টাকা যাচ্ছে। একই অভিযোগ ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহেরও।
তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। হাততালি কুড়োতে এ ধরনের কথা বলা হচ্ছে।’’ অভিযোগ মানেনি পুলিশও। জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগানের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘সভার ভিডিয়ো ফুটেজ খতিয়ে দেখি। তাতে আপত্তিকর কিছু থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
গত সোমবার ঝালদায় বিজেপির ‘অভিনন্দন যাত্রা’ চলার সময়ে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ। তাতে ঝালদা থানার আইসি-সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হন বলে অভিযোগ। পাল্টা আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তোলে বিজেপিও। সেই ঘটনায় পুলিশ পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো-সহ ৩০০ জন বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। গ্রেফতার করা হয় ছ’জন বিজেপি কর্মীকে। মিথ্যা মামলায় পুলিশ ধরপাকড় করছে বলে অভিযোগ তুলে এ দিন প্রতিবাদ সভার ডাক দেয় বিজেপি।
কৈলাস এ দিন দাবি করেন, পুলিশ জেলায় ‘স্বেচ্ছাচার’ করছে। তারই বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির কর্মীরা চুড়ি পরে নেই। আপনারা যদি আমাদের উপরে এ ভাবে অত্যাচার করেন, তা হলে আমরাও বলে যাচ্ছি, জবাব মিলবে। উন্নয়নের জন্য আমাদের কাজ করতে দিন। গণতান্ত্রিক ভাবে আমরা কাজ করতে চাই। আমরা কিন্তু দুর্বল নই। আমরা অন্তরের আগুন বাইরে আনতে চাই না।’’ একই সঙ্গে তিনি পুলিশকে হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের উপরে যাঁরা এ ভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি হচ্ছে। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে তাঁদের সবাইকে জবাব দেব।’’
পুরুলিয়ার সাংসদ দাবি করেন, ‘‘মিছিলে পুলিশ আমাকেও রেহাই দেয়নি। এখন ধরপাকড়ের নামে আমাদের কর্মীদের বাড়িতে রাতবিরেতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। এটা বন্ধ না হলে থানা ও পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে লক্ষাধিক মানুষকে নিয়ে ধর্না দেব। পুলিশ নিজেদের শুধরে নিক।’’
সভার ভিড়ে সামনের পুরুলিয়া-রাঁচী রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। তার জেরে গাড়ি চলাচলা বন্ধ ছিল ঘণ্টাখানেক। ছোটগাড়িকে বাইপাস দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হলেও যাত্রিবাহী-সহ ট্রাক প্রভৃতি আটকে যায়। বক্তব্যের গোড়াতেই পুরুলিয়ার সাংসদ কর্মীদের বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স থাকলে রাস্তা ছেড়ে দেবেন।’’ গত সোমবারই বিজেপির রাজ্য সভাপতি নদিয়ার কৃষ্ণনগরে তাঁর সভায় আটকে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্সকে রাস্তা ছাড়তে না চাওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়। অনেকে দাবি করেন, পাছে এখানেও তেমন কিছু বিতর্ক তৈরি না হয়, সে জন্য সাংসদ নিজেই ওই মন্তব্য করেন। যদিও সাংসদের দাবি, ‘‘রাস্তা আটকে গিয়েছিল বলেই কর্মীদের সজাগ করেছি। অন্য কোনও ঘটনা টেনে আনা ঠিক নয়।’’
সভায় ছিলেন বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার, ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম, বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। জেলা সভাপতির দাবি, এ দিন ভিড় হয়েছিল ১৫ হাজার। যদিও পুলিশ সূত্রের দাবি, ভিড় দেড় হাজার ছাড়ায়নি।