জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র ।
শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে তাঁর। বাঁ হাত এবং বাঁ পায়ে ব্যথা বেড়েছে। পক্ষাঘাতের মতো হয়ে যেতে পারে। ইডি হেফাজত থেকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য কমান্ড হাসপাতালে যাওয়ার পথে তেমনটাই দাবি করলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিক।
আদালতের নির্দেশে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বালুকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ইডির। সেই মতোই শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ বালুকে নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। গাড়়িতে ওঠার সময় বালু বলেন, ‘‘আমার শরীরটা খুব খারাপ। আমার বাঁ হাত এবং পা, দু’টিতেই প্রায় পক্ষাঘাতের মতো হয়ে গিয়েছে। আমি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছি। চিকিৎসা করিয়ে ফিরে আসব।’’
এ ছাড়াও সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘‘১৩ নভেম্বর আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে ব্যাঙ্কশাল আদালতে।’’ এর পরই হাত নেড়ে গাড়িতে উঠে যান প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। বালুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ আবার তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে ফিরিয়ে আনেন ইডি আধিকারিকরা।
এর আগে বুধবার স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য বালুকে কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বুধবার সকালে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য সিজিও থেকে কম্যান্ড হাসপাতাল যাওয়ার সময় বালুকে ইডির অভিষেককে ফের তলব করা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে বনমন্ত্রী বলেছিলেন, “কোন বন্দ্যোপাধ্যায়?” তার পরই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন করেন জ্যোতিপ্রিয়। বলেছিলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে? আমাদের নেতা?” তার পর একটু থেমে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “আপনাদের একটা কথা বলি শুনুন। আমি সমস্ত ব্যাপারে নির্দোষ, এটা জেনে নিন। ১৩ তারিখ আমাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হবে। সেখানে বুঝতে পারবেন আমি অত্যন্ত ক্লিয়ার।”
রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী বালু। তিনি বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন। সোমবার তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়েছিল। বালুর আইনজীবী সোমবার তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদন করেননি। তবে মন্ত্রীর কৌঁসুলি জানান, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রীর জন্য কম্যান্ড হাসপাতালে কোনও মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়নি। এ নিয়ে যখন কথা হচ্ছিল, শুধু সেই সময়েই মন্ত্রীকে আমতা আমতা করে বলতে শোনা যায়, ‘না, হয়নি...’। শুনানি-পর্ব শেষে জ্যোতিপ্রিয়কে আরও সাত দিন ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে ব্যাঙ্কশাল আদালত। আপাতত ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁকে ইডি হেফাজতেই থাকতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ অক্টোবর বালু-‘ঘনিষ্ঠ’ বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে ইডি। বাকিবুরের পাশাপাশি আরও একাধিক ব্যক্তিকেও রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। বাকিবুরকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৬ অক্টোবর বালুর বাড়ি-সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর পর গ্রেফতারও করা হয় বালুকে। ইডির অভিযোগ, রেশন দুর্নীতি থেকে আর্থিক দিক দিয়ে ‘লাভবান’ হয়েছেন বালু। মন্ত্রীর গ্রেফতারির পর তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের পাশাপাশি বর্তমান এবং প্রাক্তন আপ্তসহায়ককেও তলব করে বয়ান লিপিবদ্ধ করেছে ইডি।