অনামিকা রায় (বাঁ দিকে)। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
অনামিকা রায়কে চাকরি দিতে দেরি কেন? কারণ জানতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সচিবের কাছে হলফনামা চাইলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সচিবকে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে এত সময় লাগল কেন? এই বিলম্বের জন্য কাদের গাফিলতি রয়েছে তা-ও জানাতে হবে আদালতকে। এর পাশাপাশি পর্ষদের করণিক-সহ অন্য আধিকারিকদের নাম, পদ-সহ দেরির কারণ জানাতে হবে রিপোর্ট। ২৮ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ঘটনাচক্রে, বুধবারই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দফতরে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন অনামিকা।
গত ১৬ মে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ববিতা সরকারের চাকরি আর এক চাকরিপ্রার্থী অনামিকা রায়কে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মতো ১৪ জুলাই স্কুল সার্ভিস কমিশন সুপারিশপত্র পাঠায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। ৩ অগস্ট নথি যাচাই করার জন্য অনামিকাকে ডেকে পাঠায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। ১১ অগস্ট ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ বা পুলিশের তরফে যাচাইয়ের জন্য নথি পাঠানো হয়। ৩ অগস্ট নথি যাচাই করার জন্য ডেকে ১১ অগস্ট ওই নথি পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠানো হল কেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি। তা ছাড়া ১৬ মে নির্দেশ দেওয়ার পরেও অনামিকাকে চাকরি দিতে এত দিন লাগল কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী জানান, পুলিশ ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট তাঁরা হাতে পাননি। কিন্তু বুধবার রাজ্যের আইনজীবী বিশ্বব্রত বসু মল্লিক আদালতে জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ওই রিপোর্ট চলে এসেছে। এই প্রসঙ্গে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যে রিপোর্ট ১৫ সেপ্টেম্বর এসে গিয়েছে, সেই রিপোর্ট হাতে আসেনি বলছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী। এটি আদালতকে ‘মিথ্যা তথ্য’ দেওয়া বলে বর্ণনা করেন বিচারপতি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী অবশ্য আদালতে জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার পর চিঠি মধ্যশিক্ষা দফতরে পৌঁছয়। বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। তিনি বলেন, “১৬ এবং ১৭ সেপ্টেম্বর পর্ষদের দফতর বন্ধ ছিল। তাই ১৮ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির আগে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি আদালতকে জানানো যায়নি। বিচারপতি পুরোটা শুনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন যে, এ বার শিক্ষামন্ত্রী এবং পর্ষদের সচিবকে বলে চিঠি পর্ষদের দফতর থেকে কি তাঁকেই নিয়ে আসতে হবে?
গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনামিকার চাকরি সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টে। অনামিকা এখনও চাকরিটি পাননি শুনে এজলাসে বসেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি। কিছুটা উঁচু স্বরেই জানতে চান, কেন এখনও চাকরি পাননি অনামিকা? জবাবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী জানান পুলিশ ভেরিফিকেশনে আটকে রয়েছে ওই চাকরি। অনামিকার পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য পুলিশি যাচাই না হওয়ায় ওই চাকরি দেওয়া যাচ্ছে না। শুনে ক্ষুব্ধ বিচারপতি উচ্চস্বরেই প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন ভেরিফিকেশন হয়নি? কোন থানা ছিল দায়িত্বে?’’ অনামিকা শিলিগুড়ির কন্যা। তাঁর নাম-ঠিকানা সংক্রান্ত পুলিশি যাচাইয়ের দায়িত্ব শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটেরই। বিষয়টি বিচারপতিকে জানাতেই তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন আটকে থাকবে? উনি কি সন্ত্রাসবাদী?’’ এর পরেই পুলিশকে কটাক্ষ করে আরও একটি মন্তব্য করেন বিচারপতি। বলেন, ‘‘আসল সন্ত্রাসবাদী এলে তো পালিয়ে যাবেন!’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতার নিয়োগে কারচুপির অভিযোগে তাঁর চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বেতনও ফেরাতে হয় আদালতকে। সেই বেতনের পুরো টাকাই পেয়েছিলেন শিলিগুড়ির এসএসসি পরীক্ষার্থী ববিতা। কিন্তু সেই নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান অনামিকা। তাঁর মামলার পর দেখা যায়, ববিতার নিয়োগে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে। অনামিকা তাঁর চেয়েও ২ নম্বর বেশি পেয়েছেন। ফলে তিনিই চাকরির যোগ্য দাবিদার। এর পরই ববিতার চাকরি বাতিল করেন বিচারপতি। তাঁর চাকরি দেওয়া হয় অনামিকাকে। সেই সঙ্গে পরেশ-কন্যার থেকে যে টাকা ববিতা পেয়েছিলেন, তা-ও অনামিকার হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।