সিদ্ধার্থ দত্ত।—ফাইল চিত্র।
ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকা-সহ ১৬ সেপ্টেম্বর-পরবর্তী সব সিদ্ধান্ত তাঁর কাছে গোপন রাখায় ক্ষুব্ধ, অপমানিত হয়ে ইস্তফা দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সিদ্ধার্থ দত্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সিদ্ধার্থবাবু তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে। তাঁর বক্তব্য, ১৬ তারিখ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কমিটি (ইসি)-র বৈঠকের পর থেকে এ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে যা ঘটেছে, যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কোনও ভাবেই তাঁকে জানানো হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলোচনাও করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে তিনি অপমানিত বোধ করছেন। তাই সহ-উপাচার্যের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান।
২৮ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কমিটির বৈঠকের পরে হঠাৎই ঘেরাও শুরু করেন ছাত্রছাত্রীরা। উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার-সহ অনেকেই আটকে পড়েন। গভীর রাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের পিটিয়ে উপাচার্যকে ঘেরাও মুক্ত করে। উপাচার্য পরে জানান, ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা ঢুকেছিল। সেই কারণে তাঁর প্রাণ সংশয় হয়েছিল বলেই তিনি পুলিশের সাহায্য চান।
ঘটনার দিন সিদ্ধার্থবাবু ইসি বৈঠকে হাজির ছিলেন। ঘেরাও শুরু হলে তিনিও আটকে পড়েন। পরের দিন যখন ঘটনার নিন্দায় সবাই সরব, সিদ্ধার্থবাবু তখন স্পষ্ট জানান, পুলিশ ডাকার ব্যাপারে ইসি বৈঠকে আলোচনা হয়নি। তাঁর সঙ্গেও এই ব্যাপারে কথা বলা হয়নি। ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকার যে তিনি বিরোধী, তা-ও স্পষ্ট করে জানান সিদ্ধার্থবাবু। তাঁর কথায়, “আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব। অতীতে বহু বারই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের ঘেরাও হয়েছে। কিন্তু আলোচনাতেই সমাধান হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সিদ্ধার্থবাবুর অপমানিত বোধ করার আরও কারণ রয়েছে। সেই রাতের ঘটনার পর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বরই (১৭ তারিখ বিশ্বকর্মা পুজোর ছুটি ছিল) সহ-উপাচার্য আসেন। আন্দোলনকারী ছাত্রেরা তাঁরও পদত্যাগ দাবি করেন। পরে অবশ্য তাঁরা সিদ্ধার্থবাবুকে তাঁর দফতরে যেতে দেন। কিন্তু উপাচার্য তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি। এমনকী, বৃহস্পতিবার উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেও সহ-উপাচার্যের সঙ্গে কোনও ব্যাক্যালাপ হয়নি বলেই সূত্রের খবর।
সিদ্ধার্থবাবুর সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি। উপাচার্যের সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্যের ঘনিষ্ঠরা মনে করেন, সহ-উপাচার্য যাদবপুরেরই প্রাক্তনী। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য হন তিনি। প্রাক্তনী বলে ছাত্রদের উপরে পুলিশি নিগ্রহের ঘটনায় অনেকের থেকেই বেশি আহত বোধ করেছেন তিনি। সিদ্ধার্থবাবুর ইস্তফাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা)। সংগঠনের সহ-সভাপতি পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, “ওই রাতের ঘটনায় জুটা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছে। ইস্তফা দিয়ে সহ-উপাচার্যও নীরবে প্রতিবাদ জানিয়ে গেলেন।”