কলকাতা হাই কোর্ট। —প্রতীকী চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টে টানা তিন দিন ধরে কর্মবিরতি চলছে আইনজীবীদের একাংশের। আটকে আছে বহু মামলা। দূরদূরান্ত থেকে আদালতে এসেও বিচার না পেয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে মামলাকারীদের। এমনকি, বিচারপতিদেরও ফিরতে হচ্ছে। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। এক আইনজীবীর আবেদনের জবাবে তাঁদের কাজে ফিরতে বলেছেন তিনি। প্রকাশ্যেই এই কর্মবিরতির সমালোচনা করেছেন। কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারপতি বাগচীর মন্তব্য, ‘‘এই পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের কাছে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। ওই আইনজীবীরা ভাবছেন, এতে কিছুই হচ্ছে না। পেশাগত ভাবে এটা করা হচ্ছে। কিন্তু তা নয়। ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনকে সম্মান করতে হবে। তা না হলে নিজেদের দোষারোপ করুন।’’
বহু মামলার শুনানি আটকে আছে বলে বৃহস্পতিবার বিচারপতি বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন হাই কোর্টের এক আইনজীবী। তিনি জানান, চিটফান্ডের অনেক মামলা আটকে রয়েছে। দিনের পর দিন শুনানি হচ্ছে না। সপ্তাহে দু’দিন করে ওই সব মামলার শুনানির আবেদন জানান তিনি। এর পরেই আইনজীবীদের একাংশের কর্মবিরতি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারপতি বাগচী। আইনজীবীদের শুনানিতে অংশ নিতে বলেছেন তিনি।
সপ্তাহে দু’দিন করে চিটফান্ড মামলার শুনানির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘কেন আপনারা শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন না? এখন আপনারা শুনানিতে অংশগ্রহণ করুন। নিজেরা কর্মবিরতি করে বিচারপতিদের অতিরিক্ত সময়ে শুনানির জন্য আবেদন করার অধিকার আপনাদের নেই। আগে আপনারা বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত মামলা করুন। তার পরে আমরা শুনানির সময় বৃদ্ধি করব কি না, বিবেচনা করব। স্পষ্ট করে বলছি, না হলে আমরা কোনও সহযোগিতা করতে পারব না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা বিচারপতিরা নিজেদের কাজ করার জন্য তৈরি আছি। অন্যেরা রাজি না হলে আমরা সাহায্য করতে পারব না।’’ এর পরেই এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান দুই বিচারপতিই।
চলতি সপ্তাহে নানা বিষয় নিয়ে তিন দিনের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেন হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীদের একাংশ। ফলে এই তিন দিনে কয়েকশো মামলার শুনানি সম্ভব হয়নি। এজলাসে এসেও ফিরে গিয়েছেন বিচারপতিরা। বিচার না পেয়ে আদালত থেকে ফিরে যেতে হয়েছে বিচারপ্রার্থীদেরও। এ বার আইনজীবীদের সেই কর্মবিরতির সমালোচনা করলেন খোদ বিচারপতিই।
উল্লেখ্য, কলকাতা এবং ওড়িশা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন বৃহস্পতিবার। তিনি ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের ঘটনার তদন্তের জন্য গড়া কমিশনের চেয়ারম্যানও ছিলেন। ফলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবারও হাই কোর্টের কাজকর্ম বন্ধ রাখা হতে পারে।