মমতা, জেপি নড্ডা এবং অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।
প্রথমে ভবানীপুর। তার পর ডায়মন্ড হারবার। বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার বঙ্গসফর শুরু হচ্ছে শাসকশিবিরের দুই শীর্ষ নেতানেত্রীর খাসতালুক থেকে। বুধবার দু’দিনের রাজ্য সফরে আসছেন নড্ডা। প্রথমদিনই তিনি যাবেন ভবানীপুর এলাকায়। যা ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র। দ্বিতীয়দিন তিনি যাবেন ডায়মন্ড হারবারে। যা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্র। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি মমতা-অভিষেককে একই বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শুরু করেছে। বিভিন্ন সভায় তাদের আক্রমণের বাঁধা লব্জ হল ‘পিসি-ভাইপো’। নড্ডার সফরেও বিজেপি মমতা-অভিষেকের কেন্দ্রকেই বেছে নিয়েছে। দলের রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, তাঁরা ‘বাঘের গুহা’য় ঢুকেই লড়াই শুরু করতে চান।
নড্ডা এবং অমিত শাহ নির্বাচনের আগে প্রতি মাসে রাজ্যে আসবেন বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। বস্তুত, নড্ডা গোটা দেশ জুড়ে যে সফর শুরু করেছেন, তারই অঙ্গ হিসেবে তিনি বাংলায় দু’দিন থাকছেন। এর পরেও তিনি একাধিক বার রাজ্যে আসবেন বলে বিজেপি নেতারা জানাচ্ছেন।
তৃণমূল অবশ্য নড্ডার সফরকে কোনও গুরুত্বই দিতে চাইছে না। দলের নেতাদের বক্তব্য, নড্ডা যতবার খুশি আসতে পারেন। তাতে ভোটের ফলাফলে কোনও হেরফের হবে না। ভবানীপুর তো বটেই, মমতা গোটা রাজ্যেই বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবেন।
ভবানীপুর কেন্দ্র থেকেই মমতা পরপর দু’বার বিধানসভা ভোটে জিতেছেন। পক্ষান্তরে, অভিষেকও ডায়মন্ড হারবার থেকে জিতেছেন দু’বার। নড্ডার সফরসূচি যা বলছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে তাঁর আক্রমণের অভিমুখ কাদের দিকে থাকবে।
বুধবার ভবানীপুরে কর্মিসভা করার কথা নড্ডার। কথা রয়েছে এলাকার একটি বস্তিতে যাওয়ারও। কারণ, বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, নড্ডা দেখাতে চাইবেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা গোটা রাজ্যের উন্নয়নের কথা বললেও তাঁর নিজের এলাকাতেই তিনি উন্নয়ন করতে পারেননি। কালীঘাট মন্দিরেও পুজো দিতে যাওয়ার কথা রয়েছে নড্ডার। এর পুরোটাই মমতার খাসতালুক।
রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, ভবানীপুরে প্রায় ২ লক্ষ ভোটার রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশ মারোয়াড়ি, শিখ এবং গুজরাতি সম্প্রদায়ের। বিধানসভা ভোটে বিজেপি তাঁদের উপর ভরসা করতে চাইছে। ভবানীপুর কেন্দ্রে সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট রয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। বাকি হিন্দু। ২০১৬ সালে মমতা ভবানীপুরে জিতেছিলেন ৫৫ হাজারেরও বেশি ভোটে। তার আগে ২০১১ সালের উপনির্বাচনে তিনি জিতেছিলেন ৫৪ হাজার ভোটে। অর্থাৎ, শেষ বিধানসভা ভোটে তাঁর জয়ের ব্যবধান বেড়েছিল। ২০১৯ লোকসভা ভোটে বিজেপি দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে দ্বিতীয় হয়েছিল। জিতেছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী মালা রায়। দক্ষিণ কলকাতাকে লোকে ‘মমতার ঘাঁটি’ বলেই জানে। ভবানীপুর সেই লোকসভা কেন্দ্রেরই অন্তর্গত একটি বিধানসভা কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: শিল্পাঞ্চলের জমি থেকে শিল্প নিয়ে তোপ কেন্দ্রকে
বিজেপি-র এক রাজ্যনেতার কথায়, ‘‘আমরাও জানি ভবানীপুরে মমতাকে হারানো কঠিন। কিন্তু তা-ও আমরা সভাপতিকে ওই কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে সারা বাংলার কাছে একটা বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছি। কে বলতে পারে, রাজ্যের পরিস্থিতি যেদিকে চলেছে, তাতে অঘটন ঘটলেও ঘটতে পারে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন যাদবপুরে হেরে যাবেন, সেটাও কি কেউ হওয়ার আগে ভাবতে পেরেছিল?’’
বৃহস্পতিবার নড্ডার কর্মসূচি রয়েছে অভিষেকের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে। সেখানে একটি জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। তার পরে সেখানে একটি সাংবাদিক বৈঠকও করার কথা তাঁর। প্রসঙ্গত, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রটি সংখ্যালঘু মুসলিম-প্রধান। গত লোকসভা ভোটে সেখানে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই পিছিয়েছিল বিজেপি। ফলে ডায়মন্ড হারবার বিজেপি-র পক্ষে খুব ‘স্বস্তিদায়ক’ আসন নয়। তবুও আগামী বিধানসভা ভোটে সেখানে অন্তত চারটি আসন জেতার লক্ষ্য নিয়ে নামতে চায় বিজেপি।
আরও পড়ুন: ‘হাউডি মোদী’র কারিগর বিজয়ও নীলবাড়ির লক্ষ্যে বিজেপি-র সৈনিক