ন্যায়ালয়ে আইন ভেঙে ফের মার সাংবাদিকদের

বুধবার হাওড়ায় পুরকর্মী ও আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আইনজীবীদের একাংশের হাতে আক্রান্ত হন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০১:২৬
Share:

আহত সাংবাদিক।

আইন মেনে বিচারপ্রার্থীদের রক্ষাকবচ দেওয়া যাঁদের কাজ, আইনভঙ্গের অভিযোগ এ বার তাঁদের বিরুদ্ধেই।

Advertisement

বুধবার হাওড়ায় পুরকর্মী ও আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আইনজীবীদের একাংশের হাতে আক্রান্ত হন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা। সেই ঘটনার দু’দিন পরে, শুক্রবার একই ভাবে উকিলদের হাতে আবার আক্রান্ত হল সংবাদমাধ্যম। ষাটোর্ধ্ব এক চিত্রসাংবাদিককে মারধর করা হল আদালত-চত্বরেই। শুধু সাংবাদিক-চিত্রসাংবাদিকেরাই নয়, সহকর্মীদের রোষের শিকার হতে হল কিছু আইনজীবীকেও। হাওড়া আদালতে নিজের ঘরেই আক্রান্ত হন সরকারি আইনজীবী সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। মূল ঘটনার দিন অর্থাৎ বুধবার সোমনাথবাবু আইনজীবীদের আন্দোলনে ঠিকমতো সঙ্গ দেননি বলে অভিযোগ তুলে হাওড়া আদালতের এই প্রবীণ আইনজীবীকে হেনস্থা করেন কয়েক জন আইনজীবী। অভিযোগ, তাঁকে চেয়ার ছেড়ে চলে যেতে হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

এর পাশাপাশি তৃতীয় দিনেও আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলতে থাকায় নাজেহাল হন বিভিন্ন কাজে আদালতে আসা মানুষজন। বুধবার পুরকর্মী-আইনজীবী মারামারির খবর সংগ্রহে গিয়ে প্রথমে আক্রান্ত হন এবিপি আনন্দের হাওড়ার সংবাদদাতা সুনীত হালদার। ৩০-৪০ জন আইনজীবী তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর করেন। সেই সাবংবাদিক-নিগ্রহের ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন দুই চিত্রসাংবাদিক শুভেন্দু দাস ও কুণাল মালিক। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। সে-দিন পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের পরে আইনজীবীরা লাগাতার কর্মবিরতি-সহ বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেন। সেই আন্দোলনে শামিল হতে এ দিন হাওড়া আদালত-চত্বরে হাজির হন রাজ্যের অন্যান্য আদালতের আইনজীবীরাও।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ফ্রিল্যান্স চিত্রসাংবাদিক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন হাওড়া আদালত-চত্বরে গোলমেলে পরিস্থিতির ছবি তুলছিলেন। ছবি তোলার মধ্যেই ৫০-৬০ জন আইনজীবী তাঁকে ঘিরে ফেলেন। তাঁর কলার ধরে শুরু হয় মারধর। সঙ্গে চলে গালিগালাজ। তাঁকে মারতে মারতে আদালত-চত্বরের বাইরে বার করে দেওয়া হয়। আছাড় মেরে ভেঙে দেওয়া হয় তাঁর মোবাইল। সেই নিগ্রহের খবর সংগ্রহ করতে গেলে গালিগালাজ করে তাড়া করা হয় অন্য সাংবাদিকদেরও।

এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ আদালত-চত্বরে আইনজীবীদের এক সভায় সরকারি আইনজীবী সোমনাথবাবুকে ডাকা নিয়ে কৌঁসুলিদের মধ্যে গোলমাল বেধে যায়। আইনজীবীদের একাংশ সোমনাথবাবুকে ওই সভায় থাকতে দিতে চাননি। তাঁকে তাঁর নিজের দফতরে ফিরে যেতে বাধ্য করানো হয়। ‘‘আমি যখন সভা থেকে বেরিয়ে এসে ঘরে গিয়ে বসেছি, তখনই কয়েক জন জুনিয়র এসে আমাকে হেনস্থা করে,’’ বলেন সোমনাথবাবু।

মারধর করা হচ্ছে চিত্রসাংবাদিক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

কর্মস্থলের পোশাক পরে হাওড়া আদালত-চত্বর জুড়ে আইনজীবীদের এই ধরনের মারমুখী আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেক প্রবীণ আইনজীবী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বয়স্ক আইনজীবী এ দিন বলেন, ‘‘আইনজীবীদের আন্দোলন ন্যায্য। কিন্তু আন্দোলনের নামে আইনজীবীরা বারবার আইন ভেঙে চলেছেন কেন? তাঁরা কি ভুলে গিয়েছেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন!’’

আইনজীবীদের এমন আচরণ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না-চাইলেও হাওড়া সিভিল বার লাইব্রেরির সভাপতি সমীর বসুরায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যে-ই করুক, সাংবাদিকদের উপরে আক্রমণ আমি সমর্থন করি না। এটা আমাদের কাজ নয়।’’

বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার জানান, আগামী সোমবার কয়েকটি উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু ওই দিন পর্যন্ত আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলবে। আইনজীবীর অভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা হলফনামা তৈরি করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরে তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement