Protest

মণ্ডপ নয়, ঘরের দুর্গারা ধর্নামঞ্চে কাটাবেন পুজো

কলকাতা জুড়ে, বাংলা জুড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে দুর্গার আলো, আলোকিত দুর্গা, সালঙ্কারা সুসজ্জিতা দুর্গা। অথচ মহানগরেরই মঞ্চে মঞ্চে দুর্গাদের মুখে আলো নেই, হাসি নেই, কান্না আছে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১০
Share:

ওঁদের ছুটি নেই। প্রতীকী ছবি।

বেজে গিয়েছে মহোৎসবের ছুটির বাঁশি। কিন্তু ওঁদের ছুটি নেই। কাজ থাকলে তবে তো ছুটি। ওঁদের যে কাজই নেই! কাজের দাবিতে বিক্ষোভ আছে। অবস্থান আছে।

Advertisement

কলকাতা জুড়ে, বাংলা জুড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে দুর্গার আলো, আলোকিত দুর্গা, সালঙ্কারা সুসজ্জিতা দুর্গা। অথচ মহানগরেরই মঞ্চে মঞ্চে দুর্গাদের মুখে আলো নেই, হাসি নেই, কান্না আছে। “আমাদের ধর্নামঞ্চের মায়েরাই এক-এক জন দুর্গা। পরিবার সামলে, বাচ্চা সামলে, এমনকি বাচ্চাকে কোলে করেও তাঁদের কেউ কেউ ধর্নামঞ্চে বসছেন রোজ। মঞ্চের দুর্গাদের মুখে হাসি নেই,” বললেন অচিন্ত্য সামন্ত নামে এক কর্মপ্রার্থী।

দেবী দুর্গা পুজো নিতে পাঁচ দিন থাকবেন মণ্ডপে। অনেক পাঁচ দিনের মতো ওই পাঁচ দিনেও মঞ্চে থাকবেন ঘরের দুর্গারা, দাবি জানাতে। চাকরির দাবি। ধর্মতলা, নিউ মার্কেটের শপিং মল থেকে রাস্তাঘাটে পুজোর কেনাকাটার ঢল। তারই অদূরে নানা মঞ্চে চাকরির দাবিতে অবস্থান। চোখের জল মুছতে মুছতে মঞ্চের অনেক দুর্গা বলছেন, “পুজোর আগে নিয়োগ হয়ে গেলে আমরাও এই আনন্দে শামিল হতে পারতাম।’’ কিন্তু তা যখন হচ্ছে না, তখন পুজোর পাঁচ দিনেও ধর্না-অবস্থান চালিয়ে যাওয়া হবে বলে ঠিক করেছেন তাঁরা।

Advertisement

নিয়োগের দাবিতে পুজোর অনেক আগেই বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন তাঁরা। রবিবার দেবীপক্ষ শুরু। তাঁদের দাবি মেনে পুজোর আগে যে সকলের নিয়োগ কার্যত সম্ভব নয়, তা বুঝতে পেরেছেন প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক ও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকপদ প্রার্থী এবং ‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণি ও ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-পদ প্রার্থীরা। তাঁরা জানান, আদালতের নির্দেশেই তাঁরা ধর্নামঞ্চে বসেছেন। আদালত নয়া নির্দেশ না-দিলে পুজোর পাঁচ দিনও কাটাবেন ধর্নামঞ্চে।

নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীরা ধর্মতলা প্রেস ক্লাবের সামনে, সল্টলেক এবং ধর্মতলার গান্ধী-মূর্তির পাদদেশ— সব মিলিয়ে ৫৬১ দিন ধরে ধর্না-বিক্ষোভ চালাচ্ছেন। এখন তাঁরা রয়েছেন গান্ধী-মূর্তির পাদদেশে। দাবি ছিল, পুজোর আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু তা আর হল কোথায়? অবস্থানকারী ইলিয়াস বিশ্বাস বলেন, “ধর্নামঞ্চে অনেক মায়েরা আসেন। তাঁরা বলছিলেন, অন্তত নিয়োগ সংক্রান্ত একটা নোটিসও যদি পেতেন, তা হলে ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ফুটত।” ধর্নামঞ্চের মহিলাদের কেউ কেউ বলেন, “নিজের টাকা না-থাকলেও বাড়ি থেকে পুজোর কেনাকাটার জন্য টাকা দিয়েছিল। কিন্তু যত দিন না নিয়োগ হচ্ছে, পুজোর আনন্দে শামিল হতে ইচ্ছেই করছে না।”

ধর্মতলায় মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নীচে বসছেন গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা। প্রশান্ত দাস নামে এক প্রার্থী বললেন, “নিয়োগের দাবি পুজোর আগে মিটল না। তাই ২৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার ধর্মতলার রাস্তায় বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছি। সেখানে আমরা বলব, হয় আমাদের চাকরি দাও, নয়তো আমাদের গ্রেফতার করে পুজোটা জেলে কাটাতে দাও।” প্রশান্ত জানান, একটি নির্দিষ্ট ‘রস্টার’ বা তালিকা অনুযায়ী মহিলা চাকরিপ্রার্থীরা পুজোয় উপস্থিত হবেন বিক্ষোভমঞ্চে। মঞ্চ বন্ধ হবে না, চালু থাকবে উৎসবেও।

প্রাথমিকের প্রার্থী ও বিক্ষোভকারী অচিন্ত্য জানান, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মাতঙ্গিনী হাজরার পাদদেশে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত থাকার অনুমতি আছে। সেই নির্দেশ মেনেই তাঁরা ধর্না চালিয়ে যাবেন। প্রাথমিক শিক্ষকপদ প্রার্থী মহিলাদের অনেকে জানান, নতুন জামাকাপড় কেনার মতো মানসিক অবস্থা তাঁদের নেই। তবু বাচ্চাদের কথা ভেবে হয়তো কিছু কিছু কিনতেও হবে তাঁদের।

মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষকপদ প্রার্থীদের মঞ্চে অবস্থানকারী পিন্টু মণ্ডল জানান, তাঁদের প্রধান দাবি, গেজেটের নিয়ম মেনে শূন্য পদের সংখ্যা ‘আপডেট’ বা হালতামামির পরে তাঁদের ইন্টারভিউ নিতে হবে। এই দাবি পূরণ না-হলে দুর্গোৎসবের মধ্যেও তাঁরা বিক্ষোভ-অবস্থান থেকে উঠছেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement