আশীর্বাদ: গান্ধী মূর্তির পাদদেশে চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না মঞ্চে চলছে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
বোনেদের হাতে ধরা থালায় চন্দন আর ধান-দুব্বো। পাশেই এক জন শঙ্খ হাতে দাঁড়িয়ে। শতরঞ্চির উপরে পর পর বসে ভাইয়েরা। ভাইদের কপালে কড়ে আঙুল ছুঁইয়ে ফোঁটা দিতেই শাঁখ বেজে উঠল। বোনেদের মাথায় হাত রেখে ভাইয়েরা প্রার্থনা করলেন, আর প্রতীক্ষা নয়, এ বার যেন তোমাদের নিয়োগটা দ্রুত হয়ে যায়। অন্য দিকে, বোনেরাও ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে কামনা করলেন, তাঁদের নিয়োগও যেন দ্রুত হয়ে যায়। বোনেরা ভাইদের উপহার হিসাবে দিলেন কলম। ভাইয়েরা বোনেদের দিলেন চকলেট।
মঙ্গলবার ছিল ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে এসএসসি-র নবম থেকে দ্বাদশের
চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের ৯৭৫তম দিন। নিজেদের ধর্না মঞ্চে ভাইফোঁটার দিনটা এ ভাবেই উদ্যাপন করলেন তাঁরা। অভিষেক সেন নামে এক চাকরিপ্রার্থী বললেন,
‘‘আমরা প্রায় সব উৎসবই এই মঞ্চে পালন করি। ভাইফোঁটাও পালন করলাম।’’
তখন ঘড়িতে দুপুর ২টো ৩৫ মিনিট। মঞ্চে শুরু হয়ে যায় ভাইফোঁটার তোড়জোড়। তনয়া বিশ্বাস, সঙ্গীতা নাগ, দেবযানী মণ্ডলেরা জানান, এ দিন দুপুর ২টো ৩২ মিনিট থেকে দ্বিতীয়া পড়ে যায়। তাই তাঁরা ঠিক করেছিলেন, আড়াইটে বেজে গেলেই ভাই ও দাদাদের ফোঁটা দেওয়া শুরু করবেন। তনয়ারা জানান, তাঁদের বাড়িতেও দাদা বা ভাইয়েরা আছেন। তাঁদেরও ফোঁটা দেবেন তাঁরা। গত কয়েক বছর ধরে রাস্তায় বসেই আন্দোলন চালাচ্ছেন এই চাকরিপ্রার্থীরা। সেখানে তাঁদের সর্বক্ষণের সঙ্গী এই ভাই ও দাদারাই। সে জন্য সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল ভাইফোঁটার আয়োজন। সঙ্গীতারা জানান, আয়োজনে যাতে ত্রুটি না থাকে, সে দিকেও লক্ষ রেখেছেন তাঁরা।
অভিষেক সেন, সহিদুল্লা, স্বরূপ বিশ্বাসেরা জানান, বোনেদের আয়োজন দেখে তাঁরা মুগ্ধ। এ দিন তাঁরা বোনেদের সামান্য চকলেটই উপহার দিতে পেরেছেন। তবে, বোনেদের নিয়োগ হয়ে গেলে তাঁদের আরও ভাল কিছু উপহার দেবেন। এ দিন ভাইফোঁটার মধ্যেও কিন্তু নিয়োগের দাবিতে লেখা পোস্টার সঙ্গে নিতে ভোলেননি চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের ভাইফোঁটার মঞ্চে আসেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমও। তাঁকেও ভাইফোঁটা দেন মহিলা চাকরিপ্রার্থীরা।
এ দিন ভাইফোঁটার আয়োজন করেছিলেন শহিদ মিনারের পাদদেশে বসা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্যেরাও। সেখানে বোনেরা ভাইদের ফোঁটা দেওয়ার পরে মিষ্টিমুখ করান।
মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি-সহ নানা দাবিতে বোনেরা ভাইদের পাশে থাকার প্রতিশ্রতি দেন।