অরূপ বিশ্বাস এবং জিতেন্দ্র তিওয়ারি।—ফাইল চিত্র।
বাবুল সুপ্রিয়র প্রকাশ্য ‘তোপ’-এর ফলে বিজেপি-তে যোগদান নিয়ে দোটানায় জিতেন্দ্র তিওয়ারি। শনিবার অমিত শাহের মেদিনীপুরের সভায় তিনি বিজেপি-তে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। অন্তত শুক্রবার রাত পর্যন্ত তেমনই খবর। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, শুক্রবারই জিতেন্দ্র বলেছিলেন, তৃণমূল ছাড়লেও তিনি কোনও দলে যোগ দিচ্ছেন না। দরকার হলে আদালতে আইনজীবী হিসাবে প্র্যাকটিস করবেন।
শুক্রবার সকালে কলকাতায় রওনা হয়েছিলেন জিতেন্দ্র। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, তিনি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। সূত্রের খবর, বিকেলের পর তিনি তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই নেতা ততক্ষণে দলের কোর কমিটির বৈঠকের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। ফলে তাঁর আপ্ত সহায়কের সঙ্গে দেখা করেই জিতেন্দ্রকে ফিরে আসতে হয়। তবে রাতে তিনি রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেছেন। গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক চলছে। যদিও জিতেন্দ্রর ঘনিষ্ঠদের একাংশের রাত পর্যন্ত দাবি, তিনি আদৌ তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়ার চেষ্টা করছেন না। তাঁর বিজেপি-তে যোগদান কার্যত পাকা।
জিতেন্দ্রর ‘দোলাচল’ শুরু বাবুলের প্রকাশ্য বিরোধিতার পরেই। বৃহস্পতিবার বাবুল তাঁর ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন। সঙ্গে আপলোড করেন একটি ভিডিয়োও। যেখানে তিনি সরাসরিই বলেন, কাকে দলে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও ব্যক্তিগত ভাবে তিনি জিতেন্দ্র মতো লোকজনকে দলে নেওয়ার বিরোধী। পাশাপাশিই বাবুল এমনও জানিয়ে দেন যে, তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ওই বিষয়ে কথা বলবেন। বৃহস্পতিবার বাবুলের ওই প্রকাশ্য বক্তব্যের পর শুক্রবার থেকে রাজ্য বিজেপি-র অন্দরেও বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হতে শুরু করে। রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রকাশ্যেই বলেন, জিতেন্দ্রর বিজেপি-তে অন্তর্ভূক্তি নিয়ে বাবুলের আপত্তি ‘সঙ্গত’। রাজ্য বিজেপি-র অপর নেতা সায়ন্তন বসুও বাবুলের সঙ্গেই সহমত পোষণ করেন। যদিও সকলেই পাশাপাশি জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কথাই তাঁদের মেনে নিতে হবে। তবু বাবুল-সহ অন্যদের মতানৈক্যের খবরে বিজেপি-র মধ্যেও একটা জটিলতার সৃষ্টি হয়। সূত্রের খবর, বাবুলের সঙ্গে কথা হয় বিজেপি-র একাধিক শীর্ষনেতার।
পক্ষান্তরে, জিতেন্দ্রও বুঝে যান, তাঁর বিজেপি-তে সম্ভাব্য যোগদান নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তিনি তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু জিতেন্দ্র যে ভাবে শুভেন্দু অধিকারীর প্রকাশ্যেই প্রশংসা করতে শুরু করেছিলেন, তাতে তৃণমূলের অধিকাংশ শীর্ষনেতা তাঁর উপর আগে থেকেই রুষ্ট হয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি দল ছেড়ে দেওয়ায় শুক্রবার তাঁর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত বৈঠকটিও হতে পারেনি। ফলে চেষ্টা করেও শুক্রবার জিতেন্দ্র বিশেষ কারও সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তবে রাতে তিনি নিউ আলিপুরে অরূপ বিশ্বাসের ক্লাবে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।