‘ঘরের লোকেরা’ই এ বার আমন্ত্রিত শিল্পী। ফাইল চিত্র।
ভান্ডারে বিরূপ লক্ষ্মী। ‘ঘরের লোকেরা’ই তাই এ বার আমন্ত্রিত শিল্পী।
এ বার জঙ্গলমহল উৎসবে গান গাইবেন ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক, সভাধিপতি, পুরপ্রধান!
কেন এমন সিদ্ধান্ত? আসলে অন্য বার এই উৎসবের জন্য বরাদ্দ হত কোটি টাকা। এ বার তা কমে হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। উৎসবের দিনও ৮ থেকে কমে হয়েছে ৩। আগে ঝাড়গ্রামে হত রাজ্যস্তরের জঙ্গলমহল উৎসব। এ বার উৎসব শুধু জেলার। তাই কমেছে বরাদ্দ। অগত্যা বহিরাগত শিল্পীদের পরিবর্তে ভরসা রাখা হচ্ছে ঘরের লোকেদের উপর। নবম বর্ষের জঙ্গলমহল উৎসবের চমক— গান গাইবেন জেলাশাসক, সভাধিপতি, পুরপ্রধানেরা! ১৮ জানুয়ারি বিকেলে উৎসবের উদ্বোধনের পর এক ঘন্টা ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চ মাতাবেন প্রশাসন-পুলিশের আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা।
ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল মানছেন, ‘‘বাইরের শিল্পীদের অনুষ্ঠান এ বার হচ্ছে না। উৎসবে প্রশাসন-পুলিশের অতিথিরাই গান গাইবেন, কেউ আবৃত্তি করবেন। সংস্কৃতির যে-যে বিষয়ে প্রশাসন-পুলিশের যাঁরা পারদর্শী, তাঁরা মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবেন।’’ সূত্রের খবর, গত ৩ জানুয়ারি জঙ্গলমহল উৎসব সংক্রান্ত এক বৈঠকে এমন প্রস্তাব দেন জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল ও প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। প্রশাসন-পুলিশের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, উৎসব মঞ্চে জেলাশাসক গান গাইবেন। জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শঙ্খশুভ্র দে ‘ভাল’ গান করেন। বিনপুর থানার আইসি স্বরূপ বসাক রীতিমতো ‘মঞ্চ সফল’ গায়ক। লালগড় থানার আইসি অরিন্দম ভট্টাচার্য ভাল গিটার বাজান। জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলছেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। পুলিশের মধ্যে যাঁরা গান করেন, যাঁরা আবৃত্তি করেন, যাঁরা যন্ত্রসঙ্গীতে পারদর্শী, তাঁদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলা হবে।’’
মহড়াও শুরু হয়েছে। পুরপ্রধান কবিতা ঘোষের গলায় সমস্যা রয়েছে। তবে তিনিও বলছেন, ‘‘উৎসবের দিনে গলা ভাল থাকলে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’ গাইব। নয়তো ‘পূজারিণী’ আবৃত্তি করব।’’ প্রসঙ্গত, পুরসভায় শাসকদলের কাউন্সিলররা একদিকে, অন্যদিকে পুরপ্রধান। ফলে তাঁর গান নির্বাচন ইঙ্গিতবাহী। সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস বলছেন, ‘‘স্বরচিত গান গাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। জঙ্গলমহলের সেকাল-একালের পরিবর্তন তুলে ধরার চেষ্টা করব গানের মাধ্যমে।’’
প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা সাঁওতালি সিনেমায় একসময় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। তিনি গান ও নাচে সমান পারদর্শী। এখানে কী করবেন? মুচকি হেসে প্রতিমন্ত্রীর জবাব, ‘‘চমক দেব। এখন বলছি না।’’
‘নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে’ সিনেমায় নায়ক প্রহ্লাদ (অভিনয়ে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়) হত্যে দিয়ে পড়ে থাকত স্টুডিয়োপাড়ায়। সিনেমায় সুযোগ না পেলেও প্রহ্লাদ খুঁজে পায় নিজের অন্তর্লীন প্রতিভাকে। অভিনেতা নয়, কৌতুক অভিনেতা হয়ে ওঠে সে। ‘বহিরাগত শিল্পী’দের অনুপস্থিতিতে কি খোঁজ মিলবে এমন কোনও প্রহ্লাদের!